মো.নজরুল ইসলাম,গাইবান্ধা প্রতিনিধি
২০১৬ সালে মেয়ে জিনাত আজাদ জুমার প্রথম জন্মদিন উপলক্ষে কলেজ পাড়া এলাকার একটি দোকানে কেক অর্ডার করেন পৌরএলাকার মাষ্টার পাড়ার বাসিন্দা আঞ্জুমান আরা চৌধুরী। দোকানের মালিক সঠিক সময়ে কেক সরবরাহ করতে না পারায় মেয়ের জন্মদিন প্রায় ভেস্তেই যাচ্ছিলো। পরে কেক ছাড়াই মেয়ের জনĄদিন পালন করতে হয়েছিলো পরিবারের সদস্যদের। তখনই কেক তরির বিষয়টি মাথায় আসে আঞ্জুমানের। তারপর নিজেই কেক তরি শুরু করে হয়েছেন স্বাবলম্বী, হয়েছেন একজন সফল উদ্যোক্তা।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, আঞ্জুমান সবার কাছে আঞ্জু নামেই পরিচিত। স্বামী সাঈদ আহমেদ আজাদ জয়, দুই মেয়ে মিহদা জানśাত ও জিনাত আজাদ জুমা এবং ছেলে ইবাদত বিন সাঈদকে নিয়েই সংসার আঞ্জুর। সাঈদ আহমেদ আজাদ জয় পেশায় আইনজীবি। আর ছেলে-মেয়েরা স্কুলে পড়ছে। স্বামীর অনুপ্রেরণায় ও বন্ধুদের সহযোগিতায় ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বাসায় কেক বানানোর কাজ শুরু করেন তিনি। আর এটিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রপ দেন ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিলে। জেলা শহরে সার্কুলার রোডের মাস্টার পাড়ায় পালস ক্লিনিকের সামনে ‘আঞ্জু’স কিচেন’ নামে একটি শোরুম দিয়েছেন আঞ্জু। এই শোরুমে প্রতিনিয়ত নরমাল ভ্যানিলা, নরমাল চকলেট, চকলেট ভ্যানিলা, ব্লাক ফরেষ্ট, রেড ফরেষ্ট, রেড ভেলভেট কেক, পুডিং ও পিľাসহ বিভিনś খাবার তরি করছেন তিনি।
আঞ্জুমান আরা চৌধুরী বলেন, মেয়ের জন্মদিন কেক ছাড়াই পালন করায় কেক তরির শুরুটা সেই জেদের বশেই হয়েছিল। এরপর ঢাকায় গিয়ে শেখেন কেক তরির নিয়ম। প্রথমে আশেপাশের দু-একটি জায়গায় কেক দেয়া শুরু করেন আঞ্জু। সেসব জায়গা থেকে বেশ ভালো সাড়া পান তিনি। কেক খাওয়ার পর তারা প্রশংসাও করতেন। আর এতেই কেক তরিতে উৎসাহ পান আঞ্জু। আঞ্জু বলেন, ক্রেতাদের চাহিদা ও প্রশংসা দেখে আমার মনোবল এবং কাজ করার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। আমার বানানো কেক মানসম্মত হওয়ায় খুব অল্প সময়েই জনপ্রিয় হয়। এতে করে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী কেক তরি করে সঠিক সময়ে ডেলিভারি দিতাম। এতে আমার পরিচিতি বাড়তে থাকে। ফলে বেশ অর্ডারও পেতে শুরু করি।
বর্তমানে ব্যবসার পরিসর খুব বেশি না হলেও অল্প সময়ের মধ্যে অনেক ভালো পর্যায়ে আসতে পেরেছেন আঞ্জুমান আরা চৌধুরী। দিন-দিন তার হাতের তরি কেকের চাহিদা বাড়ছেই। বর্তমানে তিনি সাবলম্বী হয়েছেন। আঞ্জু প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকার বেশি আয় করছেন কেক তরি করে।
কলেজ ছাত্র মেহেদী হাসান বলেন, আঞ্জু’স কিচেনে তরি কেকগুলো দেখতে যেমন আকর্ষনীয়, তেমনি খেতেও অনেক সুস্বাদু। অর্ডার মোতাবেক মানসম্মত কেক তরি করে সঠিক সময়ে ডেলিভারি পাওয়া যায় এখান থেকে। আঞ্জুর স্বামী সাঈদ আহমেদ আজাদ জয় বলেন, পথে পথে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়েছে আঞ্জুকে। তবে কখনোই দমে যাননি তিনি। নিজের মেধা, মননশীলতা, কর্মনিষ্ঠা এবং একাগ্র প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন আঞ্জু।
আঞ্জু বলেন, সাহস আর কাজ করার মানসিকতা থাকলে শত ব্যস্ততার মধ্যেও কাজ করা সম্ভব। সংসার, তিন ছেলে মেয়ের লেখাপড়া ও বাবা-মাকে সময় দেয়ার পরও কেক বানানোর কাজ করে যাচ্ছি। নারীদের কর্মসংস্থান তরিতে দেশের প্রতিটি জেলায় শোরুম দিতে চাই।