নিজস্ব প্রতিবেদক :
অর্থনৈতিক চাপে পড়ার অজুহাতে কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো সহজ পথে হাঁটতে শুরু করেছে দেশের অন্যতম প্রধান ডিজিটাল সার্ভিস কোম্পানি ‘সহজ’। কোম্পানি সূত্র জানিয়েছে, মার্চ মাসে তারা বেশ কয়েকজনকে ছাঁটাই করেছে। তবে তাদের ছাঁটাইয়ের তালিকায় রয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ কর্মী। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে এই ছাঁটাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
বছর দেড়েক আগে ব্যবসা সম্প্রচারণের জন্য সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন গেট ভেঞ্চারের কাছ থেকে ১৫ মিলিয়ন ডলার বা ১২৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ পাওয়ার পরও এমন কর্মী ছাঁটাই দেশের উদীয়মান স্টার্টআপ ব্যবসার ওপরেও একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সব মিলিয়ে কর্মী ছাঁটাইকে বাঁচার উপায় বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশে প্রযুক্তিখাতের নতুন ব্যবসা উদ্যোগ বা স্টার্টআপের সম্ভাবনা বিপুল৷ অনেক সম্ভাবনাময় উদ্যোগ সাফল্যের মুখ দেখছে৷ বিদেশিরাও এ খাতে অর্থলগ্নি করছে৷ আবার অনেকগুলোই মুখ থুবড়ে পড়ছে৷
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতো বড় বিনিয়োগ পাওয়ার পরও ‘সহজ’ এর এমন করুন দশা হলে বাংলাদেশি স্টার্টআপ কোম্পানিতে বিনিয়োগে আস্থা হারাবে বিনিয়োগকারীরা। রাইড শেয়ারিং সেবাকে একটি আইনি কাঠামোতে পরিচালনায় রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু সেগুলো মেনে চলার তাগিদ দেখা যায় না সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে। অনেকটা খোলামেলা ভাবেই নীতিমালার বিরুদ্ধে গিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ‘সহজ’।
২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭’ এর অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। নীতিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হয় ওই বছরেই ২৮ ফেব্রুয়ারি। যা কার্যকর হয় ৩ মার্চ।
তবে এর প্রায় একবছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বাস্তবায়িত হয়নি এই নীতিমালা। ফলে বিশৃংখলা বাড়ছে সেবাভিত্তিক এই খাতে। আর হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।নীতিমালায় থাকা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা না মেনেই কার্যক্রম পরিচালনা করায় সরাসরি প্রভাব পড়ছে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও জনজীবনে।
রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা, ২০১৭ এর অনুচ্ছেদ (ক) ধারা ১০ এ বলা আছে, ‘ব্যক্তিগত মোটরযান রেজিস্ট্রেশন গ্রহণের পর ন্যূনতম একবছর অতিক্রান্ত না হলে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় সেবা প্রদানে নিয়োজিত হতে পারবে না।’
নতুন কেনা মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন এক বছর অতিবাহিত না হলেও সেটিকেও রাইড শেয়ারিং এ যুক্ত করার অভিযোগ আছে সহজের বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত একবছরে রাজধানীতে ‘বহিরাগত’ মোটরচালকের সংখ্যা বেড়েছে খুব দ্রুত। নগরীতে হঠাৎ করেই বেড়ে যাওয়া এই বাইক ও বাইকারের চাপে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রাজধানীর যান চলাচল এবং জীবনযাত্রায়।
পথঘাট না চেনা এবং ঢাকার সড়ক-পরিবহন ব্যবস্থা সম্পর্কে অনভিজ্ঞ হওয়ায় বাইরে থেকে আসা বাইকাররা রাজপথে তৈরি বিশৃঙ্খলা করছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে যান চলাচলে বিঘ্ন তৈরির পাশাপাশি ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পথচারী-যাত্রীরা। অনেক সময় নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
‘জীবনটাকে সহজ করুন’ স্লোগানে অনলাইনে বাসের টিকিট বিক্রি সেবা চালুর মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে সহজ ডটকম। পরবর্তীতে রাইড শেয়ারিং সেবা যুক্ত করে নতুন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু হয় চলতি বছরের ২১ মে।
রাইডার ও সংশ্লিস্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানী ঢাকায় এখন বেশ কয়েকটি মোটরবাইক ও কার রাইড শেয়ারিং কোম্পানি সেবা দিচ্ছে। এদের মধ্যে অনলাইনে বাসের টিকিট বিক্রয় প্রতিষ্ঠান সহজ যুক্ত হলেও গ্রাহকের মধ্যে তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। যে কারণে তারা সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাইডারদের কোনো সুবিধাও দিতে পারছে না। উল্টো আটকে রাখছে কমিশনের টাকাও।
সহজ রাইড ইউজার্স বাংলাদেশ নামে একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোফাইলে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও মতামত প্রকাশ করেন সহজ রাইডাররা। রাইডের কমিশন নিয়ে ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছেন সহজ এর রাইডার হারুন অর রশিদ। লিখেছেন, রাইডার ভাইদের দৃষ্টিআকর্ষণ করছি। সহজ নামের কঠিক অ্যাপস ইদানীং প্রমোশনাল অফার দিয়ে বাটপারি শুরু করেছে। প্রতিদিন নতুন নতুন অফারের লোভ দেখিয়ে রাইড দেওয়ার পর টাকা দেওয়া তো দূরের কথা, ফোনও ধরে না।
সাব্বির আহমেদ নামে এক রাইডার লিখেছেন, সব সহজ রাইডার ভাইদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, সহজ রাইডার কোম্পানি ভাওতাবাজি শুরু করেছে। আমার রাইড শেয়ারিংয়ের টাকা সহজ দিচ্ছে না। ১৫ দিন যাবৎ ঘুরাচ্ছে, কষ্ট করে রাইড দেওয়ার কি কোনো মূল্য নেই। খুব সাবধান রাইডার ভাইয়েরা।
রাজধানীর কাওরান বাজারে কথা হয় সহজের বাইক রাইডার লিমনের সাথে। তিনি জানান, প্রকৃত ভাড়ার চেয়ে জিপিএস’র ভাড়া কম আসে। জিপিএস গুগলের মাধ্যমে সরল রাস্তার ম্যাপ অনুযায়ী ভাড়া দেখায় কিন্তু ঐ গন্তব্যে পৌঁছতে অনেক ঘুরতে হয়। প্রতি রাইড থেকে তিনি ১৪ শতাংশ কমিশন দেন সহজ প্রতিষ্ঠানকে। এখানে তিনি আবার ওয়েটিং চার্জও পান না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সহজের এক কর্মকর্তা বলেন, সহজ কর্তৃপক্ষের হিসাবে অনুসারে তাদের তিন লাখ রাইডার আছে। সেই সঙ্গে ঢাকার ভেতরে ২০ হাজার ডেলিভারি কর্মী রয়েছে।