মো.নজরুল ইসলাম,গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরে তিস্তা সেতুর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন শেষে গাইবান্ধা প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেছেন সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। শনিবার বিকেলে সুন্দরগঞ্জের চৌধুরী বাজারস্থ ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়ন জাতীয় পার্টি কার্যালয়ে মতবিনিমিয়কালে এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলাবাসির দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত তিস্তা সেতুর মূল কাজ শুরু হয়ে গেছে। আশা করা যাচ্ছে যথাসময়ে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। সেতুটি নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে গাইবান্ধা-কুড়িগ্রাম জেলাবাসির স্বপ্ন পুরণ হবে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন সূচিত হবে।
এসময় গাইবান্ধা প্রেসক্লাবের সভাপতি কেএম রেজাউল হক, সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সাবু, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান চৌধুরী, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য খায়রুল ইসলাম, গাইবান্ধা ডট নিউজের বার্তা সম্পাদক ও সময়ের আলো জেলা প্রতিনিধি কায়সার রহমান রোমেল, সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে তিনি সকালে সেতুর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন এবং প্রকল্প এলাকা ঘুরে কাজের অগ্রগতি দেখেন। এছাড়া তিনি সেতু নির্মাণ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে প্রকল্প বিষয়ে আলোচনা করেন। উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোহাম্মদ আল মারুফ, উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল মুনছুর, কঞ্চিবাড়ি তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক মোখলেছুর রহমানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) গত বছরের ৬ জুলাই গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর-চিলমারি উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগকারি সড়কে তিস্তা নদীর উপর ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন দেন। ২০১২ সালে তিস্তা সেতু নির্মাণ আলোর মুখ দেখতে শুরু করে। ২০১৪ সালে সেতু নির্মাণ কাজের সুচনা হয়। সিডিউল মোতাবেক ২০২৩ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে জানা গেছে।
২০১৮ সালে উপজেলার হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতু নির্মাণসহ সংযোগ সড়কের কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয়ের জটিলতার কারণে সংযোগ সড়কের ভুমি অধিগ্রহণ এবং সেতু নির্মাণের কাজ বিলম্বিত হয়। এমতাবস্থায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য উপস্থাপন করলে গত বছরের ৬ জুলাই একনেক অনুমোদন দেন এবং কাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাইবান্ধার সার্কিট হাউজে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হরিপুর চিলমারি তিস্তা সেতুর ভিত্তি উদ্বোধন করেন। হরিপুর সেতু সংলগ্ন এলাকা হতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহর পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার পানি উনśয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি সেতুর সংযোগ সড়কে রুপান্তরের কাজ এবং গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর ধাপেরহাট থেকে হরিপুর সেতু পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ অনেকটা এগিয়ে রয়েছে।
কুড়িগ্রামের চিলমারি, রাজীবপুর ও রৌমারী এবং গাইবান্ধা জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল হরিপুর চিলমারি তিস্তা সেতুর। ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দে নির্মাণ করার হবে তিস্তা সেতু। এর মধ্যে ২৭৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে। সড়ক নির্মাণে ব্যয় হবে ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা, নদী শাসনে ৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ৬ কোটি টাকা। সেতুটিতে পিলার থাকবে ৩০টি এর মধ্যে ২৮টি পিলার থাকবে নদীর ভিতরে অংশে এবং ২টি পিলার থাকবে বাহিরের অংশে। সেতুর উভয় পাশে নদী শাসন করা হবে ৩.১৫ কিলোমিটার করে। সেতুর উভয় পাশে^ সড়ক নির্মাণ করা হবে ৫৭. ৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে চিলমারি মাটিকাটা মোড় থেকে সেতু পর্যন্ত ৭.৩ কিলোমিটার এবং গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর ধাপেরহাট থেকে হরিপুর সেতু পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার। চিলমারী অংশে একসেস সড়ক সেতু থেকে কাশিম বাজার পর্যন্ত ৫.৩ কিলোমিটার। এবং গাইবান্ধা ধাপেরহাট থেকে হরিপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার।