মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ ,বগুড়া প্রতিনিধিঃ বগুড়ায় সাংবাদিক নেতার উপর যুবলীগ নেতা কর্তৃক হামলার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সাংবাদিক নেতা কর্মীরা। সেইসাথে হামলাকারীকে গ্রেফতার করে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার বেলা ১১টার দিকে শহরের সাতমাথা এলাকায় আরটিভি এর ষ্টাফ রিপোর্টার সজল শেখের নের্তৃত্বে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার বগুড়া ব্যুরো মোহন আকন্দ, যমুনা টেলিভিশনের বগুড়া ব্যুরো মেহেরুল সুজন, এখন টেলিভিশনের উত্তরাঞ্চল ব্যুরো মাজেদুর রহমান মাজেদ, বগুড়া ফটো জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মমিনুর রশিদ শাহিন, দৈনিক মানব জমীন পত্রিকার ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি প্রতীক ওমর, দীপ্ত টেলিভিশনের বগুড়া প্রতিনিধি আবু সাইদ, দৈনিক করোতোয়া পত্রিকার ষ্টাফ রিপোর্টার রাহাদ রিটু, দৈনিক বগুড়ার ষ্টাফ রিপোর্টার জহুরুল ইসলাম, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ, বাংলা টিভি ও যায়যায়দিন পত্রিকার বগুড়া প্রতিনিধি মোঃ ইমরান হোসাইন লিখন, যমুনা টিভির বগুড়া প্রতিনিধি রাজিব সেলিম, রাইজিং বিডি এর বগুড়া প্রতিনিধি এনাম বাবুসহ প্রায় অর্ধশত সাংবাদিক।
এসময় সাংবাদিকরা বলেন অপরাধী যেই হোক যেকোন দলের অথবা যেকোন শ্রেনীর হতে পারে অপরাধ করলে তাকে অবস্যাই আইনের আওয়াতায় নেয়া পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই অতি দ্রুত তাকে গ্রেফতার না করলে আরো কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে।
উলেখ্য বগুড়ায় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক বিজয় খবরের দের ঘন্ট পরেই ২ সাংবাদিকে পেটালেন যুবলীগ নেতা। কারন হিসেবে জানা গেছে হিরো আলমকে নিয়ে নিউজ করায় সে এই ঘটনা ঘটায়। এই নেতার নাম শরিফুল ইসলাম শিপুল। তিনি বগুড়া জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি। মারধরের সময় সে মদ পান করে মাতাল অবস্থায় ছিলেন। এর আগে আরও এক সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছেন তিনি। এ ছাড়াও হিরো আলমের সঙ্গে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার কারনে এক চিকিৎসক নেতাকে মারধরের হুমকি দেয় সে। এছাড়াও হিরো আলমকে নিয়ে নিউজ করার কারনে আরো এক সাংবাদিককে খুজছেন তিনি।
বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া শহরের টেম্পল রোডে জেলা আওয়ামী লীগ অফিস সংলগ্ন টাউন ক্লাবে এই হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
মাধরের শিকার দুই সাংবাদিক হলেন বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কালের কণ্ঠের বগুড়া প্রতিনিধি জে এম রউফ এবং দৈনিক বগুড়ার সিনিয়র রিপোর্টার জহুরুল ইসলাম।
হামলার শিকার রউফ জানান, তিনি টাউন ক্লাবের অফিসে (ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে) বসে উপনির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী হিরো আলমের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলনের নিউজ লিখছিলেন। এই সময় ওই কক্ষে ছিলেন দৈনিক কালবেলার বগুড়া ব্যুরো প্রধান প্রদীপ মোহন্ত ও দৈনিক বগুড়ার জহুরুল ইসলাম ছাড়াও তার আরও দুই বন্ধু। রাত সাড়ে ১১টার দিকে যুবলীগ নেতা শিপুল মদ্যপ অবস্থায় সেখানে প্রবেশ করেন। হামলার শিকার (জে এম রউফ) সে সময় হিরো আলমের সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও তার পত্রিকার মেইলে দিয়েছেন মর্মে মোবাইলে অফিসকে অবহিত করছিলেন।
এটি শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে অশালীন ভাষায় গালাগাল শুরু করেন শিপুল। ‘সাংবাদিকরা হিরো আলমকে রাজনীতিক বানাচ্ছে’ এমন অভিযোগ তুলে তিনি রউফের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর শুরু করেন। সেখানে উপস্থিত অন্যরা রউফকে উদ্ধার এবং শিপুলকে ওই অফিস থেকে বের করে দেন। তার পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে শিপুল আবারও সেখানে প্রবেশ করে সাংবাদিক জহুরুলের ওপর চড়াও হয়। তিনি জহুরুলের গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার চেষ্টা চালান। সে সময় তাদের চিৎকারে টাউন ক্লাবের কর্মচারীরাসহ বাইরের কয়েকজন এসে শিপুলকে নিবৃত্ত করে।
যমুনা টেলিভিশনের বগুড়া ব্যুরো প্রধান মেহেরুল সুজন বলেন, বুধবার রাত ৯টার দিকে তিনি সাতমাথায় উপনির্বাচনের ফলাফল নিয়ে লাইভ করছিলেন।
এ সময় শিপুল তাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। সুজন বলেন, শিপুল ও তার কয়েকজন সহকর্মী সেখানে অবস্থান করছিলেন। তারা সবাই মদ্যপ থাকায় নিজের সম্মান রক্ষার্থে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে চলে যাই।
বগুড়া প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি ও নিউজ টোয়েন্টিফোরের বগুড়া প্রতিনিধি আব্দুস সালাম বাবু বলেন, দুই দিন আগে তাকেও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন শিপুল। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, হিরো আলমকে নিয়ে টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার করায় শিপুল ক্ষুব্ধ হয়ে এমন আচরণ করেন।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি ডা. সামির হোসেন মিশু জানান, বুধবার রাত ১১টার দিকে শিপুল শহরের সাতমাথায় আমার পরিচিতজনদের সামনে আমাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে এবং সাতমাথায় পেলে মারধর করবে বলে বেড়ায়।
বগুড়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা বলেন, শিপুল আরও একজন সাংবাদিক খুঁজে বেড়াচ্ছেন মারধর করার জন্য। এদিকে গতকাল রাতে ঘটনার পর থেকে শিপুল আত্মগোপন করেন। পুলিশ রাতেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাকে ধরতে পারেনি।