মো.নজরুল ইসলাম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি:গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার উত্তর পূর্বাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের স্বপ্নের তিস্তা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ওই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের ফলশ্রæতিতে গৃহিত বিশাল এই প্রকল্পের কাজ দেখতে প্রতিদিনই প্রচুর লোক সেখানে ছুটে আসছে। আনন্দে উৎফুল্ল তারা।
সৌদি সরকারের অর্থায়নে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর খেয়াঘাট এলাকায় ১ হাজার ৪৯০ মিটার (প্রায় দেড় কিলোমিটার) দীর্ঘ ও ৯.৬ মিটার প্রস্থ এই সেতুটির নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পেয়েছে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।
দু’পাশে ১ কিলোমিটার করে অ্যাপ্রোচ সড়কসহ মূল সেতুটি নির্মাণে ব্যয় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩৬৭ কোটি ৯৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
এছাড়া এই সেতুটিকে ঘিরে প্রায় ৮০ কিলোমিটার একসেস সড়ক উন্নয়ন, সংশ্লিষ্ট সড়কে ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মাণ, মাটির কাজ এবং জমি অধিগ্রহণসহ গোটা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা। এর তদারকির দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। দেশে এর আগে এলজিইডি এতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে আর কখনো দায়িত্বে ছিলো না।
৩১ স্প্যান বিশিষ্ট মূল সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় সেতুর দু’পাশে নদী শাসনের কাজ, ৩০টি পিলার ও ১৫৫টি গার্ডার স্থাপন, দু’পাশে এবাটমেন্ট নির্মাণ এবং অন্যান্য কাজ করা হচ্ছে।
এছাড়া, সেতুটির দু’পাশে একসেস সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ৮০ কিলোমিটার।
এরমধ্যে রয়েছে সেতু পয়েন্ট থেকে বেলকা বাজার হয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সদর, সেতু পয়েন্ট থেকে পাঁচপীর বাজার এবং পাঁচপীর বাজার থেকে ধর্মপুর হয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলার হাট-লক্ষ্মীপুর বাজার, হাট লক্ষ্মীপুর বাজার থেকে সাদুল্যাপুর উপজেলা সদর হয়ে ধাপেরহাট বাজারে গিয়ে রংপুর-বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কে সংযোগ, সুন্দরগঞ্জের শোভাগঞ্জ বাজার থেকে পাঁচপীর বাজার পয়েন্ট, মাঠেরহাট থেকে বড়–য়াহাট ওয়াপদা বাঁধ, মাঠেরহাট থেকে সদর উপজেলার কামারজানি বন্দর সড়কের উন্নয়ন কাজ।
এসব সড়ক পূর্বের ১২ মিটার প্রশস্তের স্থলে ১৮ মিটার প্রশস্তে উন্নীত করা হচ্ছে। এজন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এই সড়কগুলোতে নতুন করে ৫৮টি বক্স কালভার্ট এবং ৯টি আরসিসি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
এরমধ্যে ৯৬ মিটার দীর্ঘ একটি, ৪৮ মিটার দীর্ঘ দুটি, ২০ মিটার দীর্ঘ দুটি, ১৬ মিটার দীর্ঘ একটি এবং ১২ মিটার দীর্ঘ ৩টি সেতুর নির্মাণের কাজ চলছে।
ইতিমধ্যে গোটা প্রকল্পের ৭৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ আগামী বছরের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এব্যাপারে এলজিইডির গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছাবিউল ইসলাম জানান, তিস্তা সেতুসহ গোটা প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা চ্যালেঞ্জ হিসাবাবে আমরা নিয়েছি।
সে অনুযায়ী কাজ চলছে। তিনি বলেন, পাইলিংএর কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। মূল সেতুর ৩০টি পিলারসহ ক্যাপ স্থাপন, ১৫৫টি গার্ডারের মধ্যে ৭৫টির সংযোজন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি গুলোরও কাজ চলছে। অপরদিকে ৩১টি স্প্যানের মধ্যে ১৪টি স্প্যান স্থাপনের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। সড়ক উন্নয়নের কাজও দ্রæত গতিতে চলছে।
তিনি বলেন, সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হলে কুড়িগ্রামের চিলমারী, উলিপুরসহ ৫টি উপজেলা এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্যাপুর ও সদর উপজেলার লাখ লাখ মানুষের রাজধানীসহ পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষি পণ্য এবং অন্যান্য সামগ্রী সরাসরি বাজার জাতের দ্বার উন্মোচিত হবে।