নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিবছর জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে বাজারে পাওয়া যায় রংপুর অঞ্চলের হাঁড়িভাঙা আম। তবে এবার তীব্র দাবদাহের কারণে ১০ দিন আগেই গাছ থেকে আম নামানোর অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই এবার হাঁড়িভাঙা আম পাকতে শুরু করে। গত ১০ জুন থেকে বাজারে আম সরবরাহ শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে দাম কিছুটা কম থাকলেও সময় ও চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, এবার রংপুরে প্রায় তিন হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে নানা জাতের আমের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে রয়েছে হাঁড়িভাঙা আম। যা গত বছরের চেয়ে ৪০ হেক্টর বেশি।
আমের ফলন ভালো হওয়ায় গতবারের চেয়ে এবার প্রায় ৩৫ হাজার টন আম বেশি উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। আর উৎপাদিত আমের বিক্রি ২৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
হাঁড়িভাঙার মৌসুমে আমের সবচেয়ে বড় হাট বসে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ বাজার এবং জেলা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায়। প্রথম দিন থেকেই ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে চলছে জমজমাট বিকিকিনি।
রংপুর সিটি বাজার, লালবাগ, মডার্ন মোড়, ধাপ বাজার, শাপলা চত্বরসহ নগরীর বিভিন্ন হাট-বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে এ আম। হাট-বাজার ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন অলিগলি ও মোড়ে ফেরি করে হাঁড়িভাঙা আম বিক্রি করতে দেখা গেছে।
ফলন ভালো হওয়ায় অল্প লাভেই বেশি বিক্রির আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এ বছর অনাবৃষ্টি-অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে আমের আকার খুব বেশি বড় হয়নি।
আম চাষি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আমি তিন একর জমিতে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ করেছি। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে দুই একর আগেই বিক্রি করেছি। হাতে এক একর রেখেছি। আশা করছি দাম আরও বাড়বে।”
বর্তমানে বাজারে ছোট আকারের প্রতি মণ হাঁড়িভাঙা বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। মাঝারি আকারের ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকা; আর বড় আকারের আম ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকা।
সেই হিসাবে প্রতি কেজি আম ৩৫ টাকা থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম আরও বাড়বে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
হাঁড়িভাঙা এবার আগেভাগে বাজারে, দামে খুশি চাষি
পদাগঞ্জ এলাকার আম ব্যবসায়ী ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “গত বছরের তুলনায় এবার আমের আকার কিছুটা ছোট। তবে ফলন ভালো হয়েছে। এবার আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনায় ১০ দিন আগেই আম পাড়া শুরু হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আমের বাজার আরও বাড়বে।”
কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় আম কিনতে আসা মোস্তফা মিয়া বলেন, “অপেক্ষায় ছিলাম কবে হাঁড়িভাঙা আম বাজারে আসবে। আমের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আর একটু কম হবে মনে করেছিলাম। এই আমের স্বাদটা ভালো লাগে, তাই পরিবারের সবাই খাই।”
তরুণ উদ্যোক্তা সরকার মনজুরুল মান্নান অনলাইনে আম সরবরাহের একটি প্রতিষ্ঠান চালান। হাড়িভাঙার মৌসুমে তার ব্যস্ততাও বেড়েছে।
“এবার শুরুর দিনেই ৫ মণ আমের অর্ডার পেয়েছি।… প্রতিমণ আম ঢাকায় পাঠাতে ক্যারেট, প্যাকিং ও কুরিয়ার মিলে ১ হাজার টাকা এবং ঢাকার বাইরে পাঠাতে খরচ হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা।”
রংপুরের হাঁড়িভাঙা আমের যেমন খ্যাতি রয়েছে, তেমনি চাহিদাও তুঙ্গে। এই আম বিদেশেও পাঠানো হয়। হাঁড়িভাঙা চাষ করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় তড়িঘড়ি আম বিক্রি করায় চাষিরা সব সময় ভালো দাম পান না।
সেজন্য হিমাগার স্থাপন, আধুনিক আমচাষ পদ্ধতি বাস্তবায়ন, গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনসহ হাঁড়িভাঙাকে ‘জিআই পণ্য’ ঘোষণার দাবি জানান কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুস সালাম সরকার।
হাঁড়িভাঙা এবার আগেভাগে বাজারে, দামে খুশি চাষি
তিনি বলেন, “সরকারের উদ্যোগে দেশ-বিদেশে হাঁড়িভাঙা আম রপ্তানি শুরু হয়েছে। আমরা এতে খুশি। তবে আর একটু দৃষ্টি দিলেই হাঁড়িভাঙাকে ঘিরেই এই অঞ্চলের অর্থনীতি আরও সচল হবে। এজন্য সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন ও পরিবহন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা জরুরি।”
রংপুর জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, চাষিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ জুন থেকে হাঁড়িভাঙা আম পাড়া শুরু হয়েছে। আম বাজারজাত করতে যাতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, সে জন্য জেলা প্রশাসন থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে।
বিশেষ করে পরিবহন ব্যবসায়ীদের যাতে কোনো হয়রানির শিকার হতে না হয়, সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ আমের বাজারগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।