শামীম রেজা ডাফরুল, গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সরকারি ঘোষনার ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও তরলীকৃত (এলপি) গ্যাসের দাম কমেনি । চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে সরকারি ভাবে নির্ধারিত ১২ কেজি ওজনের প্রতিটি সিলিন্ডারের দাম ৯৯৯টাকা নির্ধারণ করা হলেও তা মানছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
এর ফলে প্রয়োজনের তাগিদে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে একশ’ টাকা বেশি দামে বিক্রি গ্যাস কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ভোক্তারা। অসাধু এই সিন্ডিকেটের কারসাজিতে উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকার হাট-বাজার থেকে গ্যাস কিনতে গিয়ে গত ১২ দিনে অতিরিক্ত কয়েক লক্ষ টাকা গচ্ছা দিতে বাধ্য হয়েছেন সাধারণ ভোক্তারা। কমদামের এই সুফল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত এখানকার সাধারণ ক্রেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে এই উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার সিলিন্ডার এলপি গ্যাস বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এ হিসেবে গত ১২ দিনে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়েছে গ্যাস ক্রেতাদের।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভোক্তারা জানান, প্রতি মাসের প্রথম দিনে গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত ১২ কেজি ওজনের তরলীকৃত (এলপি) গ্যাসের দাম সমন্বয়ের সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী চলতি মাসে ৭৫ টাকা কমিয়ে প্রতি সিলিন্ডারের দাম ৯৯৯টাকা নির্ধারণ হয়। কিন্ত ‘পূর্বের দামে কেনা গ্যাস বিক্রি শেষ হয়নি’ এই অজুহাত তুলে ক্রেতাদের কাছ থেকে এখনও তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১শ’ টাকা করে। এতে করে সরকারের দেয়া মূল্য কমানোর ঘোষণা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে।
উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের মাস্টারপাড়া এলাকার গৃহবধু জান্নাতুন হাবীব অভিযোগ করে বলেন, সংবাদপত্র ও টিভিতে দেখি, প্রতি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে সরকারিভাবে এলপি গ্যাসের দাম বাড়ানো বা কমানো হয়।
যে মাসে দাম বাড়ে, এই খবরটি নিয়ে সংবাদপত্র বাজারে আসার আগের দিন অর্থাৎ টিভিতে প্রচারের ৫ মিনিটের মধ্যে এখানকার দোকানগুলোতে গ্যাসের দাম বেড়ে যায়। কিন্ত দাম কমলে তা সহজে আর কমে না। সকল পণ্যের দাম বৃদ্ধির এই সময়ে এবার গ্যাসের দাম কমানোটা যেন ব্যবসায়ীদের মনে জ¦ালা ধরিয়েছে। তারা এই দাম কমানোটা যেন মেনে নিতে পারছেনা।
১২ দিনেও এলপি গ্যাসের দাম কেন কমছেনা, জানতে চাইলে গোবিন্দগঞ্জের ওমেরা গ্যাসের ডিলার মেসার্স জেনী এন্টারপ্রাইজের মালিক সরাসরি জানালেন, কোম্পানী থেকেই দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। ৯৯৯টাকা দরে কিনে পরিবহণ খরচ দিতে গিয়ে তাই বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
ওমেরা গ্যাসের বগুড়ার টেরিটরি অফিসার নূরুল আমিন মুন্না টেলিফোনে জানান, আমাদের কোম্পানী থেকে ৯৯৯টাকা দরেই ডিলারদের কিনতে হয়। এর সাথে পরিবহণ ও মাল খালাসের মূল্য যোগ করে বেশি দামেই বিক্রি করতে হয় ডিলারদের। মূল্য সমন্বয়ের আগে গ্যাস কোম্পানীগুলোর সাথে সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের সমন্বয়হীনতার কারণেই দাম কমার ঘোষণা আসলেও প্রকৃতপক্ষে দাম কমে না।
যমুনা, বসুন্ধরা ও জি-গ্যাসের ডিলার বিমল কুমার সাহা বৈদ্য জানান, বগুড়া ডিপো থেকে সরবরাহ বন্ধ থাকায় মংলা থেকে গ্যাস আনতে অতিরিক্ত সময় ও টাকা ব্যয় হওয়ায় গ্যাসের দাম নির্ধারিত দরের চেয়ে কিছুটা বেশি নিতে হচ্ছে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন।
গোবিন্দগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আরিফ হোসেন জানান, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।