ফিরোজ কবির শাওন: ২০২৩ সালের আন্তর্জাতিক জরিপে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধূমপায়ী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। ধূমপানের অভ্যাস বহু শতাব্দী ধরে বিশ্বজুড়ে চলমান । তবুও আজ তামাক সেবনের প্রতিকূল প্রভাব এবং এর সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলো ব্যাপকভাবে পরিচিত। আর আজকের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজে ধূমপানের পরিমাণ হ্রাস করার জন্য বিশ্বজুড়ে সক্রিয় প্রচারাভিযান চালু রয়েছে। যদিও সামগ্রিক বিচারে ধূমপানের হার গত ৫০ বছরে অবশ্যই হ্রাস পেয়েছে। তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি— বর্তমানে বিশ্বে বেশ কয়েকটি দেশে সক্রিয় ধূমপায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১৩ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় নিউ-ইস্কাটন বিয়াম অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশ ব্লাইন্ড মিশন আয়োজিত’ বাংলাদেশে তামাক বন্ধের বর্তমান পরিস্থিতি এবং সামনের পথ নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তামাকের ব্যবহার কমানোর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে মনোযোগী স্টেকহোল্ডারদের সক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয়ে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রফেসার ড. এএইচএম মুস্তাফিজুর রহমান (সাবেক ভিসি কবি নজরুল ইসলাম ইউনিভার্সিটি)।
মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, তামাকের ব্যবহার কমানোর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও বাংলাদেশে তামাক বন্ধের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আমাদের কাজ শুরু করতে হবে। স্কুল, কলেজের ছাত্র/ছাত্রী ও অভিভাবকদের নিয়ে সাংবাদিকরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে কাজ করলে তামাকের ব্যবহার কমে আসবে।
কর্মশালায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, মোহাম্মদ সামসুল ইসলাম এপিডেনিয়োলজিস্ট। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৫১ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে সাড়ে ৬ কোটি লোক তামাক গ্রহণ করে থাকে। যার শতকরা হিসাবে ৩৯.১০% সক্রিয় ধূমপায়ী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশে বার্ষিক মৃত্যুর প্রায় ১৪% তামাক গ্রহনে দায়ী। হার্ট এবং ফুসফুসের রোগ, ক্যান্সার এবং স্ট্রোকসহ ধূমপান প্রকৃতপক্ষে অনেক বাংলাদেশীর জন্য উদ্বেগের একটি প্রধান কারণ।
বিশ্বে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ছয়টির সঙ্গেই তামাক জড়িত। তামাকের এই সর্বগ্রাসী ক্ষতি প্রতিরোধে ২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসি স্বাক্ষরিত হয়।
বাংলাদেশ সরকার জনস্বাস্থ্যের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ প্রণয়ন করে। ২০১৩ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনে। তারপরও আইনটিতে বেশকিছু দুর্বলতা রয়েছে । তাই দ্রুত আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সাংবাদিক অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন।
সাংবাদিকরা কয়েকটি বিষয়কে আলোচানায় নিয়ে আসেন যেমন-
আইনের দূর্বলতা : তামাক জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি ক্ষতিকর পণ্য। এটি নিয়ে বিতর্ক করার অবকাশ নেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া’র ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য যখনই কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়; তখনই তামাক কোম্পানির গাত্রদাহ শুরু হয়ে যায়। তারা বিভিন্ন ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়। সরকার ও নীতিনির্ধারকদেরকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করার জন্য নানা প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। এই সকল বাঁধা উপেক্ষা করে একসাথে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠা/ এনজিও পরিচালকগণ একসাথে দাবি তুলতে হবে, তামাকের ব্যবহার বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, সাংবাদিক সমাজ তাদের লেখনীর মাধ্যমে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদন করতে পারবে। এসিড, ইভটিজিং যে ভাবে দেশে নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে সকলের প্রচেষ্টা থাকলে তামাকের ব্যবহারও নিয়ন্ত্রণে আসবে।
‘বাংলাদেশ ব্লাইন্ড মিশন এর সভাপতি মোঃ জুয়েল আহমেদের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল খন্দকার মোঃ মোজ্জাম্মেল হক, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের নির্বাহী প্রডিউসার নায়লা পারভীন পিয়া, বিবিএম এর ফারিয়া সুলতানা, উম্মে কাওছার সুমনা ও খন্দকার আবেদুল ইসলাম প্রমুখ।