বগুড়া প্রতিনিধিঃ বগুড়ার সোনাতলায় ৪র্থ শ্রেণির এক শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষন চেষ্টার পর থেকে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে ঐ শিশু কিন্তু এঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি কর্তৃপক্ষ। বরং বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের হরিখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত ৮ আগষ্ট এই ঘটনা ঘটে। ৪র্থ শেণীর ঐ শিশু শিক্ষার্থীর পরিবার ও স্থানীয়রা জানায় গত ৮ তারিখে বৃষ্টি হচ্ছিল এই কারনে শিশুটি নির্দিষ্ট সময়ের একটু আগেই বিদ্যালয়ে পৌছে। তাকে একা পেয়ে বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী কাম দপ্তরী মোঃ জাকারিয়া শাহীন শিশুকে প্রথমে চকলেট, বিস্কুটসহ নানা ধরনের খাবার কিনে দেয়ার প্রলোভন দেখায়।
এসব নিতে রাজি না হলে এক পর্যায়ে বলে তুমি কত টাকা নিবে? যা চাইবা তাই পাইবা, যদি আমার সাথে গিয়ে একা একা ঘরে গিয়ে সময় দাও। এই কথাতেউ রাজি না হলে এক পর্যায়ে ঘারে ধাক্কা দিয়ে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে নিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষন করার চেষ্টা করে।
এসময় শাহীন তার নিজের শরীরে পোশাক খোলার জন্য দাড়ালে এই ফাঁকে দৌড় দিয়ে পালিয়ে যায় ঐ শিশু শিক্ষার্থী। এর পর থেকে এপর্যন্ত আর বিদ্যালয়ে যায়নি শিশুটি ।
জানা গেছে লোক লজ্জার কারনে সে অন্যকোন আত্বীয়ের বাড়িতে অবস্থান করছে। পরিবার বলেন এঘটনায় আমরা আমাদের সন্তাতের ভবিষ্যতের চিন্তা ও বর্তমানে বেঁচে থাকা নিয়েই সংকিত।
ভুক্তভোগির দাদী আরও বলেন, ঘটনার কয়েকদিন পর ঐ স্কুলের সহকারী শিক্ষক সুজাউদ্দৌলা তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে বলেন, শোন! তোমার নাতিন ছোট মানুষ! যা হওয়ার হয়ে গেছে এটা নিয়ে আর বেশি বাড়াবাড়ি করো না আমরা মিমাংসা করে দিব।
পরে ঐ শিক্ষক আক্ষেপ করে বলেন, ছোট বাচ্চার সাথে পিয়ন এই কাজটা করে ঠিক করেনি, আরে তোর কিছু করতে চাইলে ঐ স্কুলে বড় বড় ছাত্রী আছে তাদের কারও সাথে কর।
পিয়ন কাম নৈশ প্রহরী শাহ জাকারিয়া শাহিন হাঁসরাজ গ্রামের সাখাওয়াতের পুত্র। হরিখালি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌছে শাহিনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে প্রধান শিক্ষক আয়ার মাধ্যমে ডাকলে আয়া কিছুক্ষণ পরে এসে বলেন শাহিন নেই। প্রধান শিক্ষক শাহিনকে মোবাইল ফোনে ডাকার চেষ্টা করে বলেন, শাহিন নেই।
কোথায় আছে তিনি জানেন না। স্কুল ছুটি হওয়ার পর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও শাহিনের দেখা মেলেনি।
বিষয়টি জানতে একাধিকবার মুটোফোনে নৈশপ্রহরী জাকারিয়া শাহিন এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় হরিখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরে প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশীদ এর সাথে মুটোফোনে কথা বললে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন আমাদের বিদ্যালয়ের নানাবিধ কর্মব্যস্তার কারনে এই ঘটনার কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনি।
তবে দ্রæত একটা ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন এঘটনায় ইতিমধ্যে স্থানীয়রা মিমাংসার জন্য চেষ্টা করেছে তবে হয়নি। তিনি আরো বলেন এই বিদ্যলয়ে যোগদানের পর এটিই এধরনের প্রথম ঘটনা।
এ বিষয়ে সোনাতলা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ এনায়েতুর রহমান বলেন এই ঘটনায় আমি একটি মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি এবং কিছু সাংবাদিক আমাকে বিষয়টি অবগত করেছে।
আমি দ্রæত হরিখালি প্রাথামিক বিদ্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি জেনে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। শিক্ষা কর্মকর্তা আরোও বলেন এইসব নৈশ প্রহরীদের নানাবীধ কান্ডে আমরা অতিষ্ট হয়ে গেছি। তাদেরকে কিছু বলাও যায়না কারন এরা সবাই রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত এবং দলীয় লোকজন। সেকারনে তাদেরকে কিছু বললে বরং আমাদেরকেই কথা শুনতে হয়। এই কর্মকর্তা বলেন তারা আসলে প্রাইমারির কোন নিয়োগপ্রাপ্ত নয় তারা চুক্তিভিত্তিক কাজ করে থাকে। ইতিপূর্বে কিছু বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী নান ধরনের অপরাধ করেছে এর মধ্যে ল্যাপটপ চুরি, বিদ্যালয়ের কক্ষে অবাধে মাদক সেবন, অনিয়মিত উপস্থিতি, এবং রাতে বিদ্যালয়ে থাকার কথা থাকলেও তারা কেহই থাকেনা।
বিভিন্ন সময় এসব নিয়ে নানা ধরনের ভয়ভিতী দেখেও কোন কাজ হয়নি। এদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
বগুড়া জেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জাভেদ আক্তার বলেন আপনাদের মাধ্যমে যেহেতু বিষয়টি জানতে পারলাম আমি দ্রæত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে ঘটনার সত্যতা জানবো এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
উল্লেখ্য সোনাতলা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার এতটাই অবনতী হয়েছে যে, প্রতিনিয়ত কোন না কোন বিদ্যালয়ে নানা ধরনের অঘটন ঘটছেই।
এতে করে একদিকে ছোট ছোট শিশু শিক্ষার্থীদের মনে নানা ধরনের দুশ্চিন্তা ও মানসিক অবক্ষয় হচ্ছে অন্য দিকে শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে চরম হুমকির মুখে।
স্থানীয়দের দাবি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতীর জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা যেনো দ্রæত গ্রহণ করা হয়।
তারা আরো বলেন উপজেলাল কর্মরত বেশিরভাগ শিক্ষক বগুড়া জেলা শহর থেকে যাতায়াত করেন। একারনে প্রতিনিয়ত অনেক শিক্ষক ১১টার পরে বিদ্যালয়ে পৌছে এবং ৩টার মধ্যেই বিদ্যালয়ে ত্যাগ করে চলে যায়। তাই শিক্ষার মান ফিরে আনতে অনিয়মিত শিক্ষকদের তালিকা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা খুবিই জরুরী।
উল্লেখ্য গত ১৭ আগষ্ট উপজেলার সরলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ শামসুজ্জোহা ও সহকারী শিক্ষিকা সামচ্ছুন্নাহারের অনৈতিক কর্মকান্ডে এলাকাবাসী তাদের অবরুব্ধ করে রাখে। এক পর্যায়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাহায্যে নিয়ে চরম উত্তেজনার মধ্যেই বিদ্যালয় পরিত্যগ করে।
এঘটনায় পরের দিন সদ্য বিদায়ী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ সাহা উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে বলেন আগামি ৫ দিনের মধ্যে তাদের দুজনকে বদলী করা হবে কিন্তু এঘটনার ১০ দিনের বেশি হয়ে গেলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বরং পূণরায় ঐ দুই শিক্ষক বিদ্যালয়ে তাদের পাঠদান করাতে শুরু করেছে। এতে করে স্থানীয়দের মধ্যে চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।