এম আর অভি, বরগুনা :বরগুনা শহরের ভাড়ানীর খাল ও খাকদোন নদীর তীরে গড়ে ওঠা পুরাতন মাছ বাজারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদী দখল মুক্ত করে পুনরায় নদী ও নদীবন্দরের জমি বন্ধোবস্ত দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
খাকদোন নদী ও ভাড়ানীর খালের তীরের জমি পুনরায় বন্ধোবস্ত দেয়ায় জনমনে অসন্তোষ বিরাজ করছে। যেখানে সারাদেশে নদী দখল মুক্ত করছে সরকার, সেখানে উল্টো বরগুনায় নদীর জমি বন্ধোবস্ত দিয়ে নদী ও খাল দখলে সহয়তা করছে স্থানীয় প্রশাসন এমন অভিযোগ উঠেছে।
বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আলহাজ¦ মো. জাহাঙ্গীর কবির এ অভিযোগ তোলেন। তিনি সংবাদকর্মীদের বলেন বরগুনা শহরের খাকদোন নদীর তীরের পুরাতন মাছ বাজারের জমি বন্ধোবস্তে প্রশাসনকে দেয়ার নামে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা অবৈধ ঘুষ লেনদেন হয়েছে।
তিনি এ অবৈধ ঘুষ টাকা লেনদেনের বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কাওসার হোসেনের কাছে তদন্তের দাবী জানান।
গত রোববার বেলা ১১ টায় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কাওসার হোসেন ও সহকারি কমিশনার ভ‚মি (এসিল্যান্ড) চন্দন কর বরগুনা পুরাতন মাছ বাজারের সম্প্রতি বন্ধোবস্ত দেয়া জমি পরিদর্শনে আসেন।
এর পূর্বে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মো. জাহাঙ্গীর কবির ,পৌর মেয়র অ্যাড. কামরুল আহসান মহারাজ, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম, ঢলুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ আজিজুল হক স্বপন ও বরগুনা নদী বন্দরের সাবেক সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ ও বর্তমান সহকারী পরিচালক নিয়াজ মোহাম্মদ খান সরোজমিনে পুরাতন মাছ বাজারে উপস্থিত হন। এ সময় (ইউএনও) মো. কাওসার হোসেন বরগুনা নদী বন্দরের সাবেক সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদকে জন-সম্মুখে ধমক দিয়ে পোসন কাকে বলে প্রশ্ন করেন। এতে দু জনের মধ্যে মৃদ তর্কের সৃষ্টি হয় ।
পরে ইউএনও মো.কাওসার হোসেন ও বরগুনা নদী বন্দরের সাবেক সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ নদী বন্দরের জমি বন্ধোবস্ত দেয়া নিয়ে পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য দেন। বরগুনা নদী বন্দরের সাবেক সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির গেজেটের মাধ্যমে এ জমি বরগুনা নদী বন্দরের।
এ জমি বন্ধোবস্ত দেয়ার কারো এখতিয়ার নেই। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন নদী বন্দরের এ জমি বন্ধোবস্ত দিয়ে নদী দখলের সহয়তা করছে।
তিনি আরো বলেন আমরা নদী বন্দরের জমি দখল মুক্ত করতে স্থানীয় প্রশাসনের কোন সহযোগীতা পাইনা। অপরদিকে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো.কাওসার হোসেন পুরাতন মাছ বাজারের জমি তরিঘড়ি করে বন্ধোবস্ত বুঝিয়ে দিতে যেন মহাব্যস্ত।
তবে প্রশ্ন উঠেছে মাছ বাজারের ৪৩ টি ঘর অবৈধ দখলের নামে কেন উচ্ছেদ করা হয়েছে আবার তা পুনরায় বন্ধোবস্ত দেয়া হচ্ছে, তাছাড়া এখানে পূর্বে প্রায় ৩০টির মত মালিাকানা ঘর ছিল।
সেখানে কিভাবে পুনরায় প্রায় ৮০ জনকে বন্ধোবস্ত দেয়া হয়। এর রহস্য কি। তিন বছর আগে সাবেক পৌর মেয়র মাছ ব্যবসায়ীদের জন্য এ পুরাতন মাছ বাজারে পাশেই কিছু অংশে গড়ে তোলেন আধুনিক মানের একটি দ্বীতল মাছ বাজার ভবন।
যেখানে মাছ বিক্রীসহ আড়ৎদারদের জন্য রয়েছে আধুনিক মানের সুযোগ-সুবিধা। বরগুনার সুশিল সমাজ,পরিবেশবাদীদের দাবী নদীর জমি বন্ধোবস্ত না দিয়ে নদী দখল মুক্ত করে নদীর জমিতে বনায়নের করে পরিবেশ রক্ষা করা হোক।
দখলদারদের দৌরত্বে ঐতিজ্যবাহি নদীটি আজ পরিণত হয়েছে মরা খালে।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী ফকের মোল্লা বলেন, আমরা ১৯৮৯ সালের ২৫ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সালামী টাকা দিয়ে খাজুরতলা মৌজার ২ শতাংশ জমি স্থায়ী বন্ধোবস্ত নিয়ে মাছের ব্যবসা করে আসিতেছি এবং এ জমি রেজিস্টি করে পেতে ২০১৩ সালে মহামান্য হাইকোটে একটি মামলা দায়ের করি।
মামলাটি বর্তমানে চলমান এবং এ জমির ওপর নিষেজ্ঞা রয়েছে। তিনি আরো জানান, এ বছরে ২১ মার্চ কোন নোটিশ ছাড়াই হঠাৎ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাদের নিজস্ব শ্রমিক ভেকু দিয়ে আমাদের মাছের আরৎ খানা ভেঙ্গে ফেলে।
এতে আমরা আর্থিকভাবে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হই। ম্যাজিস্ট্রেট আমাদের কাগজপত্র না দেখে পুর্বের বন্ধোবস্ত পাওয়া আমাদের ভোগদখলীয় জমি প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তারা অনৈতিক ভাবে লাভবান হতে মাছ ব্যবসার সাথে জড়িত না এমন অন্য লোকজনকে পুনরায় বন্ধোবস্ত দিয়েছে।
সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক এ বিধি বর্হিভ’ত বন্ধোবস্ত বাতিলের দাবী জানাই।
বরগুনার সহকারি কমিশনার ভ‚মি (এসিল্যান্ড) চন্দন কর এর কাছে সম্প্রতি পুরাতন মাছ বাজারে কতটি বন্ধোবস্ত দেয়া হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে প্রতিবেদককে বলেন, না দেখে বলা যাবে না তবে আনুমানি ৭০টি বন্ধোবস্ত দেয়া হয়েছে। তথ্য নিতে তার অফিসে যেতে আহব্বান জানাই।
উল্লেখ্য এ বছরের ২১ শে মার্চ জেলা প্রশাসন নদী দখল মুক্ত করতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নামে বরগুনা পুরাতন মাছ বাজারের কয়েকটি মাছের আরৎ ও ২টি বরফ মিলসহ প্রায় ৪৩ ঘর ভেকু দ্বারা গুড়িয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করে।
এতে মাছ বাজার ব্যবসায়ীদের ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। উচ্ছেদের প্রায় তিন মাস পরে বরগুনার সহকারি কমিশনার ভ‚মি (এসিল্যান্ড) চন্দন করসহ তিনজন কর্মকর্তার স্বাক্ষরে গত ৩ জুলাই থেকে নতুন করে এ জমি এক বছরের জন্য পুনরায় বন্ধোবস্ত দেয়া হয় ।