মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ ,বগুড়া প্রতিনিধিঃ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষিকার অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী।
এঘটনায় তুলকালাম কান্ড হয়ে গেলেও গত কয়েক মাসে কোন ধরনের ব্যবস্থা না নিয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীবিহীন বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা আসলে তাদেরকে বিদ্যালয়েটির ভেতরে রেখে বাহির থেকে তালা দিয়ে সারাদিন অবরুব্ধ করে রাখে এলাকাবাসী। এমন কান্ডে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এই এলাকায়।
বিগত কয়েকমাস থেকেই চলছে এই লঙ্কাকান্ড। এর আগেও এই বিদ্যালয়ে দুই শিক্ষক শিক্ষিকার ঘটনায়, তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা, ইট-পাটকেল ছোড়া, ছবি তোলার ঘটনায় মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া, অপমান অপদস্ত ও গালিগালাজসহ নানা ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার তেকানী চুকাইনগর ইউনিয়নের সরলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা এটি। গত প্রায় এক বছর ধরেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সামছুজ্জোহা ও সামছুন্নাহারের বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ আনে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটি, স্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি ও অভিভাবকবৃন্দ।
এঘটনায় বিভিন্ন সময় স্থানীয়ভাবে সালিস বিচার করা হলেও তাদের উভয়ের সম্পর্কের কোন ব্যতয় ঘটেনি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তারা বলেন এলাকায় একাধিকবার সালিস বিচার ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর কিন্তু মাসের পর মাস কেটে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এতে করে এই দুই শিক্ষক আরো ব্যপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের নানা ধরনের কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে এলাকাবাসী। স্থানীয়রা বলেন প্রতিনিয়ত স্কুল চলাকালীন সময়েয় হাত ধরে নদীর ধারে ঘুরে বেরানো, বিদ্যালয়ের ভেতরেই নানা ধরনের হাসিঠাট্টা ও রংতামাসা করা।
এছাড়াও একাধীকবার অনৈতিক সম্পর্কের ঘটনা শিক্ষার্থী দেখে ফেলাসহ নানা ধরনের ঘটনায় আমরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। তারা আরো বলেন যতদিন পর্যন্ত এই দুই শিক্ষককে অপসারন অথবা অন্যত্র বদলি না করা হয়েছে এতোদিনে আমরা আমাদের সন্তানদেরকে বিদ্যালয়ে পাঠাবোনা।
প্রয়োজনে অন্য কোন বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেব। কারন এসব কুকীর্তি দেখে আমাদের সন্তানেরা খারাপ হোক এটা আমরা চাইনা।
সরেজমিনে দেখা যায় গত ১৭ ও ১৮ তারিখে কোন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়নি।
এছাড়া ১৮ তারিখে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সামসুজ্জোহা ও সহকারী শিক্ষক সামসুন্নাহারসহ অন্য দুই সহকারী শিক্ষক নাসরিন সুলতানা ও আবুতাহের বিদ্যালয়ে প্রবেশ করলে এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের গেইটের বাহির থেকে তালা লাগিয়ে দেয়।
এঘটনায় সারাদিন অবরুব্ধ হয়ে থাকে তারা। এ অবস্থা দেখে স্থানীয়দের অনুরোধ করে তালা খুলে ভেতরে গিয়ে শিক্ষকদের সাথে কথা বললে তারা বলেন আমাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ এনে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে।
তার পরেও আমরা হোম ভিজিটে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলেছি এদের মধ্যে কেউ অসুস্থ, কেউ অত্বীয়ের বাড়িতে বেরাতে গিয়েছে আবার কিছু অভিভাবক তাদের সন্তানদেরকে ইচ্ছা করেই পাঠায়নি।
এসময় সামসুন্নাহার বলেন ইতিপূর্বে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসে আমাদেরকে ৫ দিনের ছুটি দিয়েছিল এবং বলেছিল অন্যত্র বদলি করা হবে কিন্তু এখনো পর্যন্ত তা করা হয়নি। আমারো আর ইচ্ছা হয়না এতোসব অপবাদের পর বিদ্যালয়ে আসি কিন্তু না এসে উপায় কি।
এর আগে এসব ঘটনার কারনে এক রবিবারে বিদ্যালয়ে না আসায় ডিপিও স্যার আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছে। তিনি এও বলেছেন যে আপনি কিভাবে স্কুল করবেন সেটা আপনার বিষয়।
সামসুন্নাহার বলেন আমি উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ করবো যে, অতি দ্রুত আমাকে এখান থেকে অন্যত্র বদলী করা হোক। এখানকার যে পরিস্থিতি তাতে যেকোন সময় একটি দুর্ঘনা ঘটে যেতে পারে।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সামছুজ্জোহা বলেন আমাদের যে বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। তার পরেও আমরা এই বিদ্যালয়ে আর থাকতে চাইনা।
কারন এখানে আমাদের চাকুরি করা আর নিরাপদ নয়।সোনাতলা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ এনায়েতুর রহমান বলেন আমরা এই বিষয়টি নিয়ে খুবিই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ছিলাম এক পর্যায়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে সরোলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ধর্মকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ডেপুটেশনে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান চৌধুরীর সাথে কথা বলার জন্য বিগত কিছুদিন থেকে মুটোফোনে যোগাযোগ ও ম্যাসেজ করেলেও পাওয়া যায়নি। এছাড়া কয়েকদিন অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। ইতিপূর্বে এই বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার তার সাথে কথা বললে তিনি বিষয়টি এরিয়ে যায়।
অর্থাৎ এ ঘটনায় ইতিমধ্যে অনেকেই জেলা শিক্ষাকর্মকর্তাকে দোষারোফ করছেন। এছাড়া তার দায়িত্বে অবহেলার কারনেই যে, ঘটনাগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারেই অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার দিকে যাচ্ছে তা ইতিমধ্যেই পরিষ্কার হয়েছে।
প্রসংগত এই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়মিত অফিস না করাসহ নানা ধরনের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য বিগত কয়েকমাসে সোনাতলা উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে নানা ধরনের অনিয়মের সংবাদ ছাপা হলেও এসবে কোন গুরুত্ব নেই জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার।
যেমন: দাউদেরপারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী শুন্যের ঘটনা আলোচিত হলেও তা এখনো ওরকমই রয়েছে। মহব্বতের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই অবস্থা।
এছাড়া শালিখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে এলাকাবাসীর মানববন্ধসহ নানা ধরনের কর্মকন্ড থাকলেও এপর্যন্ত তার কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এঘটনায় সদ্য বদলিপ্রাপ্ত সোনাতলা উজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন আমি এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের সত্যতা পেয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রিপোর্ট প্রদান করেছি। তবে ব্যবস্থা কবে হবে তা আমার জানা নেই।
সরলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন যেহেতু আমি বিষয়টি জানলাম অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।