রবিউল ইসলাম, ঝিনাইদহ \ ইটের ভাটায় কয়লা দিয়ে ইট পোড়াতে হবে, কাঠ পোড়ানো যাবে না, সরকারের এমন কঠোর আইন থাকলেও ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার পদ্মপুকুর গ্রামে এক ইট ভাটায় রয়েছে করাতকল। এই করাতকল থেকে কাঠ কেটে ভাটায় ব্যবহার করা এই অবস্থা দীর্ঘ কয়েক বছর চললেও কারো কোনো পদক্ষেপ নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মতে মহেশপুরে ২২টি ইট ভাটা রয়েছে যার মধ্যে ২টি ভাটার লাইসেন্স রয়েছে।
ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রন আইন ১৯৮৯ ও ২০০১ সনের ১৭নং অনুচ্ছেদের ৪ ও ৫ ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে আবাদি জমিতে কোন ইটভাটা তৈরী করা যাবে না। এছাড়াও কাঠ পুড়ানো যাবে না। অথচ সকল ইটভাটায় কয়লার বদলে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসন লোকজন জরিমানা আদায় করলেও ইটভাটা বন্ধ করে না। ফলে প্রভাবশালীরা প্রতি বছর নতুন নতুন ইটভাটা তৈরী করছে।
ইট ভাটাগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সুত্রের মতে মহেশপুর উপজেলায় প্রায় ২২টি ইট ভাটা রয়েছে। প্রতিটি ইটভাটায় বছরে ৫০ থেকে ৬০ লাখ ইট তৈরী করেন। আর এই পরিমান ইট পোড়াতে অবৈধ ও ব্যারেল চিমনীর ভাটা গুলোতে কাঠের ব্যবহার করতে হয় হাজার হাজার মন কাঠ। বিপুল পরিমান কাঠের সবই কাঠুরে দিয়ে দুর থেকে ফাঁড়াই করে আনতে হয়। যা অনেক ভাটা মালিকদের পক্ষে কষ্টকর হয়ে যায়। এই কারনে রাফি ব্রিকস্ ভাটার সঙ্গেই করাতকল স্থাপন করে নিয়েছেন। এই করাতকলে কাঠ কাটা হচ্ছে আর ভাটাই ব্যবহার হচ্ছে।
সরেজমিনে ভাটায় গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার পদ্মপুকুর-শ্যামকুর সড়কের পাশে পদ্মপুকুর গ্রামের মাঠে বিশাল জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত রাফি ব্রিকস্। এই ভাটায় গোটা এলাকা জুড়েই রাখা হয়েছে কাঠ আর কাঠ। নানা প্রজাতির বড়-ছোট গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। ভাটাটির দক্ষিণ পাশে বসানো হয়েছে করাতকল। করাতকলের চারিপাশে কাঠের স্তুপ। এই করাতকলে কাঠ ফাঁড়াই করা হচ্ছে আর তা ফেলা হচ্ছে ভাটায় চুলায়। জ্বালানি হিসেবে কাঠই তাদের ভরসা।
পদ্মপুকুর গ্রামের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে জানান, বেশ কয়েক বছর এরা এভাবে ভাটার সঙ্গে করাতকল রেখে সেটাতে কাঠ কেটে ভাটায় ব্যবহার করছেন। প্রতি বছরই হাজার হাজার মন কাঠ ব্যবহার করা হয়। এই ভাটাগুলোর মালিক তারা স্থানিয় ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করতে পারেন না। যে কারনে তারা বড় বড় গাছ কেটে নিজেদের প্রয়োজন মতো ফাঁড়াই করে চুলায় ব্যবহার করছেন।
ভাটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাফি ব্রিকসসহ অধিকাংশ ইট ভাটা কাঠের উপর নির্ভর করেই চলছে। এখানে কয়লার ব্যবহার হয় না। একটি ভাটায় বছরে আনুমানিক ৫০ হাজার মন কাঠের প্রয়োজন হয়। যা বিভিন্ন মাধ্যমে সংগ্রহ করেন।
তিনি আরো জানান, এই গাছ ইচ্ছামতো ফাঁড়াই করে ভাটায় ব্যবহারের সুবিধার জন্য ভাটার সঙ্গেই করাতকল বসিয়ে নিয়েছেন রাফি ব্রিকস ।
এ ব্যাপারে রাফি ব্রিকস্ এর মালিক ও ইটভাটা সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেন জানান, কাজের সুবির্ধাতে সব কিছুর প্রয়োজন সে কারণে করাত কলটিও রাখা হয়েছে। তিনি আর বলের নিউজ করেন এর আগেও অনেক নিউজ হয়েছে। নিউজ করে কিছইু করতে পারবেন না?
সচেতন মহলরা বলছেন, ওই ভাটাগুলোর মালিকরা যে দুঃসাধ্য দেখিয়েছেন তা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে আইনের প্রতি তার বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানোর বিষয়টি। তাদের এই ক্ষমতার উৎস কোথায় তা খুজে বের করা জরুরী। তারা অবিলম্বে ভাটাগুলো বন্ধসহ মালিক পক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।
মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপ দাস বলেন, অবৈধ ইট ভাটা গুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।