মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ ,বগুড়া প্রতিনিধিঃ বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকাগুলোতে ১ দিনের মেলার কথা থাকলেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দুই দিনের মেলায় এবার প্রকাশ্যেই চলছে রমরমা জুয়ার আসর। প্রথম দিনে প্রশাসনের সামনেই এসব জুয়া চললেও দ্বিতীয় দিনে কৌশলগতভাবে মেলা থেকে প্রশাসন নাগালের বাহিরে থেকে এসব জুয়া চালাতে সহযোগিতা করেছে বলে দাবি স্থানীয়দের। তবে এসব কথার মিল পাওয়া গেছে মেলা কমিটির সাথে কথা বলে। জোরগাছা ইউনিয়নের বুরোর মেলা কমিটির সদস্য আব্দুর রশিদ বলেন, এবারের মেলা নিতে আমাদের এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
ইজারা নিতে গেছে ৩৫ হাজার। এছাড়া এখানে ওখানে দেয়া লাগে, আওয়ামী লীগ নেতাদের দিতে হয়েছে ১৫ হাজার, আরোতো আছেই। এখানে ওখানে বিষয়ে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারাতো বুঝেনি, এসব কি আর বুঝানো লাগে। তিনি আরো বলেন কাগজে কলমে এক দিনের মেলার পারমিসন থাকলেও ইউএনও স্যারকে বলে আমরা দুই দিনের করে নিয়েছি। তিনি খুবিই ভালো মনের মানুষ।
ঠাকুরপাড়ার খালের দুই পাশে ১৪ ও ১৫ তারিখ দুই দিনের মেলায় প্রায় ৬টি জুয়ার বোড বসেছিল। এসব জুয়ায় সবথেকে বেশি অংশগ্রহণ ছিল স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থীদের। এমনকি ১০-১২ বছরের শিশুদের অংশগ্রহণও ছিল বেশ। সরেজমিনে উপস্থিত থেকে দেখা মেলে বেশ কয়েটি জুয়ার আসর।
বিষয়টি সোনাতলা থানার অফিসার ইনচার্জ বাবু কুমার সাহাকে জানালে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। এবং মেলায় দায়িত্বে থাকা অফিসার মোঃ এরশাদ-২ এর কথা বলতে বলেন। সে অনুযায়ী এসআই এরশাদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, একদিনের মেলা ছিল সে অনুযায়ী আমরা গতকাল মেলায় ছিলাম তবে আজ আমরা নেই। বরং আপনি ঐ ইউনিয়নের বিট অফিসার মাহমুদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করেন। এস আই মাহমুদুলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আমি বিশ মিনিটের মধ্যে চলে আসবো।
তার কথা মতোই ৩০ মিনিটে মেলায় উপস্থিত হয় এস আই মাহমুদুল কিন্তু তিনি সিভিল পোশাকে মাস্ক পরে মেলায় পৌছিলেও কাল্পনীকভাবে জুয়ারুরা বিষয়টি জানতে পারে এবং তারা মেলা থেকে সটকে পরে। বিষয়টি স্থানীয়দের চোখে অনেকটা সন্দেহের। তাদের দাবি প্রশাসন পৌছার পূর্বেই জুয়ারুদের কাছে খবর দেয়া হয়েছে। এই কথার সত্যতা মেলে জুয়ারুদের সাথে কথা বলে। তারা বলেন দুই দিনের মেলায় থানায় ২০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। পুলিশ আসলেও আমাদের কিছুই হবেনা অর্থাৎ কোন সমস্যা নেই।
শুধু এই মেলায় নয়, মধুপুর ইউনিয়নের হরিখালিতেও জুয়ারুদের একই অবস্থা এখানে দুই দিনে প্রায় ৪টি আসরে চলছে জুয়া। তেকানী চুকাই নগর ইউনিয়নের কাচারি মেলাতেও চলছে দুটি বোর্ড তবে এই মেলার জুয়াটি ছিল জনসমাগমের বাহিরে।
১৫ তারিখ সন্ধ্যায় জুয়ার এসব খবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অফিসার ইনচার্জ ওসিকে জানালে তার ঘন্টাখানেকের মধ্যেই মেলায় পৌছে যায়। কিন্তু তারা মুটোফোনে মেলা ভেঙ্গে দেয়ার কথা শোনালেও মেলায় পৌছে তাদের চিন্তা ভাবনা পরিবর্তন হয়ে যায়। মেলায় পৌছেই তাদেরকে ফটোশেসন করতে দেখায় যায়। এতে অংশ নেন নির্বাহী কর্মকর্তা রাবেয়া আসফার সায়মা, এ্যাসিল্যন্ড প্রতীক মন্ডল, ওসি বাবু কুমার সাহা ও এসআই মাহমুুদুল। তাদের ফটোশেসনসহ নানাবিধ কারনে মেলা কমিটি আরো উৎসাহ পায় এবং মেলা আরো জমজমাটভাবে চলতে থাকে।
এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন আপনারা মেলায় কিরকম দেখলেন। এর জবাবে এই প্রতিবেদক বলেন, মেলায় প্রকাশ্যে জুয়া চলছে, তিনি আরো জানতে চান যে মদ চলছে কি?
প্রশাসনের এমন কান্ডে এসএসসি পরিক্ষার্থী ও অভিভাবরা অনেকটাই বিব্রত। কারন মেলায় বাজানো হচ্ছিল উচ্চস্বরে সাউন্ড বক্স ও মাইক। এছাড়া হাজার হাজার লোকের সমাগম ও হইহুলোরতো আছেই।
এবিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাকের সাথে কথা বললে তিনি মেলাগুলোর তালিকা চান এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। একই কথা বলেন পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী।
প্রশাসনের এমন কর্মকান্ডে ইতিমধ্যে সোনাতলা উপজেলার সাধারণ মানুষগুলো বিব্রত। তাদের দাবি অতি দ্রুত জুয়া, মাদকসহ সকল অপারাধমূলক কর্মকান্ড বন্ধ করে সাধারণ মানুষদের পাশে দাড়াতে।