রবিউল ইসলাম, ঝিনাইদহ: আজ থেকে প্রায় ৪০/৪৫ বছর আগে বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক ঝিনাইদহে থেকে একটি হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন টানা হয় কালীগঞ্জ বিদ্যুৎ পাওয়ার হাউজ পর্যন্ত। যেটা ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ পৌরসভার শ্রীরামপুর, চাপালী, নদীপাড়া হয়ে আড়পাড়া গ্রামের উপর দিয়ে টানা হয়।
এই সঞ্চালন লাইনে ৩টি তারের প্রতিটি তারে ৩৩ কেভি পাওয়ার সম্বলিত। মাটি থেকে তারের উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। যখন এই এলাকায় এই সঞ্চালন টানা হয়, তখন এই এলাকায় তমন কোন বসতি ছিল না।
আস্তে আস্তে যখন বসতি শুরু হয়, তখন অনেকেই না জেনে এই তারের নীচে বাড়ী ঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করে। তখন বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক তাদের বাড়ী ঘর করতে বাঁধাও দেন নাই।
বর্তমানে এই তারের নীচে ৫ শতাধিক বাড়ী ঘর রয়েছে। বিদ্যুতের তার একেবারেই ঘরের চাল বা ছাদের ছুই ছুই অবস্থায় রয়েছে। আর পৌরবাসী জীবন বাজি রেখে এই তারের নিচে বসবাস করছেন।
এই হাই ভোল্টেজ তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে অকালে ঝরে গেছে নির্মাণ শ্রমিক, রং মিস্ত্রিসহ কয়েক জনের প্রাণ। আবার পঙ্গুত্ব বরণ করছেন অনেকেই।
বিদ্যুৎ আইনে আছে, সঞ্চালন লাইনের নীচে কোন ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা যাবে না। এই সঞ্চালন লাইনের ডানে বামে কমপক্ষে ১০ ফুট বাদ রেখে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করতে হবে।
তবে সেই সময় থেকে এ সবের দিকে কোন খেয়াল করেননি সংশ্লিষ্ট কর্র্তপক্ষ। কালীগঞ্জ পৌরসভার অনেক বসত বাড়ির উপর বিপদজনক ভাবে ঝুলে রয়েছে এই বিপজ্জনকভাবে হাই ভোল্টেজের সঞ্চালন লাইনের তার।
সরোজমিনে গিয়ে কথা হয় আড়পাড়া (দরগাপাড়া) গ্রামের হারুন ড্রাইভারের সাথে তিনি বলেন, এই তারে স্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে কয়েকজন এবং পঙ্গুত্ববরণ করছে অনেকেই।
পৌর এলাকার (নদীপাড়া), আড়পাড়া, মধূপট্টি, কোটচাঁদপুর, মাঠপাড়া, দরগাপাড়া, চাপালী, শ্রীরামপুরসহ এই এলাকার বাসা বাড়ির ওপরে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে রয়েছে হাই-ভোল্টেজের সঞ্চালন বিদ্যুৎ লাইনের তার।
আমরা আমাদের পরিবারের কোমলমতি শিশু, বৃদ্ধাসহ সবাই খুবই নিরাপত্তা হীনতা ভাবে বসবাস করছি।
চাপালী গ্রামের কলেজ শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন বলেন, এই তার স্থাপনের পর থেকে অদ্যবদি এই সঞ্চালন লাইনের যে ভাবে মেরামত বা সংস্কার করা দরকার সেভাবে করা হয়না।
বর্তমানে লাইনটি অত্যন্ত বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ লাইনে দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে। গত ২৫ বছরে এই এলাকায় বাড়ি ঘর নির্মান করতে যেয়ে নির্মাণ শ্রমিকসহ ৪/৫ জন অকালে প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে অনন্ত ৭ জন। তারের নীচে বসবাসকারীরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছে।
আড়পাড়া গ্রামের ডাঃ ফয়সাল আহমেদ বলেন, লাইনের বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এতো নীচু দিয়ে হাই-ভোল্টেজের লাইন যাওয়ায় অনেকে বাসাবাড়ি নির্মাণ করতে পারছেন না। আবার অনেকে বাসার কাজ শেষ করতে পারছে না। এ কারণে জায়গা জমি থাকার পরও অনেকের জমি পতিত পড়ে আছে অনেক জমি।
এলাকাবাসী বিপদজনক এই হাই-ভোল্টেজ সঞ্চালন লাইন থেকে নিরাপদে বসবাসের জন্য সংশ্লিষ্ট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলার ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী (ওজোপাডিকোর) নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটা অনেক আগে স্থাপিত হয়েছে এখন এটা রক্ষনা-বেক্ষন করা হয়।
এটা যেভাবে আছে এভাবেই থাকবে। আপতত এই সঞ্চালন লাইন সরানোর কোন পরিকল্পনা নেই।