উজ্জ্বল মজুমদার, সিকিম থেকে: একদা তিব্বত ও ভারতের পরিবহনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা গ্যাংটক এখন এক রাজ্যের রাজধানী ও ব্যস্ত পাহাড়ি শহর।
অসাধারণ প্রাকৃতিক সম্ভাবের পাশাপাশি আধুনিক শপিং কমপ্লেক্স, সাইবার কাফে, নাইট ক্লাব, পুল পার্লার এবং নানা পকেটের অসংখ্য হোটেল ও রেস্টুরেন্ট নিয়ে গ্যাংটক পর্যটকদের স্বর্গরাজ্য।
এম জি মার্গ এখানকার ধর্মতলা, তবে সেখানে গাড়ির প্রবেশ নিষিদ্ধ। তাছাড়া এই অঞ্চল নোংরা করা বা থুথু ফেলা দণ্ডনীয় অপরাধ। ডিসেম্বরে বসে ফুড ও কালচার ফেস্টিভ্যাল।
১ম দিন বিকেলে টাইটানিক পার্ক বা মলের বেঞ্চে বসে আপন খেয়ালে সময় কাটিয়ে দিন। ওই দিনই পাখীর চোখে গ্যাংটক দেখতে বাই-কেবল জিগ ব্যাক রোপওয়েতে চাপুন।
দেওরালি থেকে তাসিলিং সেক্রেটারিয়েট পর্যন্ত ১ কিমি যেতে ৭ মিনিট লাগে। ভাড়া ৩০ টাকা। গন্তব্যে পৌঁছে রিজ পার্ক ঘুরে দেখুন। পার্কের নিচের ফ্লাওয়ার ফেস্টিভ্যালও দেখতে পারেন
রুমটেক ও অন্যান্য
দ্বিতীয় দিন ভোরবেলা ৮ কিমি উত্তরের তাসি ভিউ পয়েন্টে পৌঁছাতে পারলে সূর্যোদয় দেখতে পাবেন। তার পরে চলে যান গনেশ টক।
সেখানে কাফেটেরিয়ায় বসে যখন গ্যাংটক ও সংলগ্ন অঞ্চলকে দেখবেন, তখন দিগন্তে উঁকি দেবে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও সিনিয়লচু শৃঙ্গ।
পরের গন্তব্য শান্ত ও নির্জন দূষণহীন পরিবেশে ৭,২০০ ফুট উচ্চতার হনুমান টক। সেখানে হনুমান মন্দির দর্শনের পাশাপাশি আবারও কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখুন, তবে অন্য রূপে।
সেলেপ ওয়াটার ওয়ার্কসও চোখে পড়বে, যেখান থেকে শহরে জল সরবরাহ করা হয়। কাছেই রাজপরিবারের সমাধিক্ষেত্র। নির্জন পাহাড়ের মাথায় শান্ত পরিবেশে
বিশ্ববিখ্যাত নামগিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ টিবেটোলজি। এখানে লেপচা, তিব্বতি ও সংস্কৃত পুঁথি, মূর্তি ও বিরল থাঙ্কার অভাবনীয় সম্ভার রাখা আছে।
সংলগ্ন সংগ্রহশালায় আছে বুদ্ধদেব সংক্রান্ত নানা দ্রষ্টব্য। গ্যাংটক থেকে ২৩ কিমি পাহাড়ি পথে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের অন্যতম পীঠস্থান ও সিকিমের বৃহত্তম মনাস্ট্রি রুমটেক।
সিকিমের গ্রামীণ পটচিত্রের মাঝখান দিয়ে পাহাড়ি ধানখেতকে সঙ্গী করে, সুন্দরী ঝর্নাকে পাশ কাটিয়ে ঘন সবুজের মধ্যে দিয়ে এ এক অসামান্য গন্তব্য। তিব্বতি স্থাপত্যের
অনবদ্য নমুনায় তৈরি এই মনাস্ট্রি দেখতে-ই হবে। ষোড়শ শতাব্দীতে নবম কর্মপা লামা ওয়াংচুক দোর্জে বুদ্ধ ধর্মের প্রচার ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের থাকার জন্যেই এই বিশাল মঠ নির্মাণ করেন।
এখানে বৌদ্ধধর্মের কিছু বিরলতম নিদর্শন রাখা আছে। সমস্ত দেয়াল, প্রার্থনা গৃহ, ছাত্রাবাস ও অন্যান্য স্থানে তিব্বতের নিজস্ব রীতিতে আঁকা বিভিন্ন বৌদ্ধ মুরাল ও ফ্রেস্কো চোখ কেড়ে নেবে।
কাছেই নেহরু বটানিক্যাল গার্ডেন। রুমটেক সংলগ্ন বিভিন্ন লজে থাকারও ব্যবস্থা আছে।
কাছেপিঠে
শহরের আশে পাশে আছে আরও নানা দ্রষ্টব্য। যেমন, এনচে মনাস্ট্রি, দোদ্রুল চোর্তেন, বটানিক্যাল গার্ডেন, বান ঝাকরি ফলস, ব্ল্যাক ক্যাট মিউজিয়াম, চোগিয়াল পার্ক, ওয়াটার গার্ডেন, সারামসা গার্ডেন, হাইকোর্ট মিউজিয়াম ইত্যাদি। সময় থাকলে ঢুঁ মারতে পারেন
ছাঙ্গু লেক, বাবা মন্দির ও নাথুলা পাস
৩য় দিন প্রথমে চলে যান গ্যাংটক থেকে ৩৮ কিমি দূরে ১২,২০০ ফুট উচ্চতায় ছাঙ্গু লেক, যার স্থানীয় নাম সোমগো, অর্থ ‘জলের উত্স’।
লেকের জলে বরফে ঢাকা চারদিকের পাহাড়ের ছায়া পড়ে, সে সৌন্দর্য অন্যরকম। আর এদের বরফগলা জলেই ছাঙ্গু পুষ্ট হয়।
এক এক ঋতুতে এর এক এক রূপ। শীতে যেমন জমে যায়, তেমনি বসন্তে চারদিকের ফুলের শোভা অনন্যতা দেয়। শীতে স্নো-বুট ভাড়ায় মেলে। পবিত্র এই লেকে গুরু পূর্ণিমায় গোটা রাজ্য থেকে পূণ্যার্থীরা ভীড় জমান।
একান্ত অসম্ভব না হলে রঙিন ইয়াকের পিঠে সওয়ার হয়ে লেকের চারপাশে ঘুরে নিতে পারেন। এমন সুযোগ হাতছাড়া করার নয়। ছাঙ্গু যাওয়ার পথেই পড়বে বাবা মন্দির, যা আসলে ক্যাপ্টেন হরভজন সিংয়ের স্মৃতিতে নির্মিত।
ছাঙ্গু থেকে ১৩ কিমি দূরে নাথুলা পাস। উচ্চতা ১৪,৪০০ ফুট। চারদির পুরু বরফের চাদরে মোড়া। এখানে সকাল ৮টা-বিকেল ৩টে-তে সোঙ্গো লেকের ওপরে দিয়ে যাওয়া রোপওয়ের স্বাদ নিতে পারেন।
জেনে নিন
পুলিশ চেকপোস্ট ফর ডোমেস্টিক ট্যুরিস্ট দপ্তর থেকে অনুমতি পত্র নিয়ে ছাঙ্গু লেক, বাবা মন্দির ও নাথুলা পাস যেতে হয়।
পর্যটন দপ্তরও নাথুলা পাস যাওয়ার অনুমতি দেয়।আবার সামান্য মূল্যের বিনিময়ে হোটেলগুলিও অনুমতির ব্যবস্থা করে দেয়। তবে সঙ্গে ভোটার কার্ড ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি থাকা দরকার।