সৈয়দা রাশিদা বারী,কবি ও সাহিত্যিক: কয়েক বৎসর যাবৎ বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের রপ্তানী খাতে বেশ মন্দাভাব বিরাজ করছে।
যে পরিমাণে অর্ডার সংগ্রহ হয় তাতে করে একদিকে দ্রব্যমূল্য কমে গেছে তেমনি তুলনামূলক ভাবে অর্ডার বাড়েনি।
সেই ৯০ দশক যেটা কিনা ছিল গার্মেন্টস শিল্পের স্বর্ণযুগ, যখন দিনে দিনে গার্মেন্টস শিল্পের কারখানা বেড়ে উঠেছিল।
সেই সময়ে গার্মেন্টস মালিকেরা একটি ফ্যাক্টরী থেকে গ্রুপ কোম্পানীর মালিকে পরিণত হয়েছে।
এখন এই ২০০০-২০১০ এর পরবর্তী এবং ২০১৯-২০২০ এর করোনা কালীন সময় থেকে এখন অবধি কয়েকশ প্রতিষ্ঠিত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক বায়িং অফিসও কমে গেছে।
সাভারে প্রতিষ্ঠিত কিউ পয়েন্ট ফ্যাশানস্ লিঃ, বাডস্র্ গ্রুপ বন্ধের উপক্রমে পরিণত হয়েছে। ময়মনসিংহ ভালুকাতে অবস্থিত গ্লোরী টেক্সটাইল এন্ড এ্যাপারেলস্ লিঃ, স্পিনিংসহ কম্পোজিট ফ্যাক্টরী বন্ধের আশংকায় রয়েছে।
এভাবে অন্যান্য ফ্যাক্টরীর মধ্যে এলায়েন্স এ্যাপারেল লিঃ, কম্পোজিট ফ্যাক্টরী, নীট কনসার্ন কম্পোজিট ফ্যাক্টরী, রূপসী গার্মেন্টস এন্ড কম্পোজিট, জেনেটিকস ফ্যাশানস লিঃ, সুপ্রভ কম্পোজিট, আদুরী এাপারেলস্ লিঃ কম্পোজিট, অন্তিম গ্রুপ কম্পোজিটসহ প্রায় ৬০০শত ফ্যাক্টরী অলরেডি হুমকির সম্মুখীন হয়ে গেছে।
এভাবে গার্মেন্টস শিল্পের ধ্বস হলে প্রায় ২ কোটি লোক বেকারত্ব মধ্যে পড়তে পারে।
অন্যদিকে কাস্টমস্ এর চরম দুর্নীতিতে ফ্যাক্টরী মালিকেরা ফ্যাক্টরী ও বন্ড আপডেট করতে ব্যর্থ হয়।
এতে করে তারা বিদেশ হতে কাঁচা মাল ফেব্রিকস, এক্সেসরিজ, সুতা আমদানি করতে ব্যর্থ হয়। যে কারণেও গার্মেন্টস শিল্পের এ মন্দার একটা বিশেষ কারণ।
এখন মানুষতো উপর দেখে। ভিতর তো কেউ দেখে না। উপরে ফিটফাট ভিতরে শুন্য মাঠ। বর্তমানে পোশাক শিল্পের অবস্থা হয়েছে তাই।
এই সব ফ্যাক্টরীগুলো কোনভাবেই বেঁচে উঠতে পারছে না। বন্ধের হুমকিতে পরিণত হয়েছে। একদিকে যেমন ভালো প্রাইস এর অর্ডার কমে গেছে।
গার্মেন্টস অর্ডার এর পরিমাণ যথেষ্ট নয় সেই সব সংশ্লিষ্ট ফ্যাক্টরীর জন্য। অন্যদিকে একটি অর্ডার এর বিপরীতে ফেব্রিক্স, এক্সেসরিজ, সুইং সুতা, ইয়ার্ণ, বাটন, জিপার এর জন্য ব্যাংক এ ফ্যাক্টরী মালিকেরা ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলতে যেমন ব্যর্থ হচ্ছে।
তেমনি অনেক সময় ক্ষেপণ করে এলসি দিলেও এতে গার্মেন্টস এর শিপমেন্ট ডেট/ তারিখ ওভার হয়ে যাচ্ছে।
এরপর ফরেন এবং লোকাল দুইটারই এলসি’র বিপরীতে ব্যাংক ম্যাচিউরিটি দিতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংক।
ফ্যাক্টরী মালিকের ভাষ্য মতে জানা যায়, ব্যাংক গুলোতে কোন প্রকার তারল্য নেই।
আবার অন্যদিকে ব্যাংক এর ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিপার্টমেন্টের ভাষ্য মতে, বেশির ভাগ ফ্যাক্টরী গুলোর লিমিট অতিক্রম করেছে। যেকারণে ব্যাংক সেই সীমাবদ্ধতায় অর্ডার এর বিপরীতে দ্রুতগতিতে এল.সি সম্পাদন ব্যর্থ হয়।
ফ্যাক্টরী মালিকদের ব্যাংক ফোর্স লোন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিকে যেমন ফ্যাক্টরী বিপদে পড়বে তেমনি ব্যাংক এর অবস্থা হবে নাজুক।
এর ভিতরে আবার গার্মেন্টস ওয়ার্কররা আন্দোলন চলমান রেখেছে। তাদের চাকুরীর বৈষম্য নারী পুরুষ চাকুরীর সম অধিকার, বেতন বৈষম্য, বেতন বৃদ্ধি, বেতন সঠিক সময়ে পাওয়া ইত্যাদি বিষয় নিয়ে।
আশুলিয়া হামিম গ্রুপ জোন, গাজীপুর জোন, সাভার জোন ইতাদি এলাকায় বেশ কয়েকদিন যাবত সেনাবাহিনী তৎপরতা চালিয়ে তাদের অভিমান চলমান রেখেছে।
এতে করে ওয়ার্কাররা ফ্যাক্টরীর বিদ্যুৎ ডিসকানেক্ট করা, কাজ বন্ধ করা, ও কাজের নানান বাধার সৃষ্টি করেছে।
এভাবে ফ্যাক্টরী মালিকদের অনেকপণ্য এায়ার শিপমেন্ট ও বায়ার ডিসকাউন্ট এ পরিণত হচ্ছে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গোøারী টেক্সটাইল এন্ড এ্যাপারেলস্ লিঃ কম্পোজিট ফ্যাক্টরীতে ২০ লক্ষ গার্মেণ্টস শিপমেন্ট করতে পারছে না।
ওয়ার্কারদের আন্দোলন ও এই ফ্যাক্টরীর ব্যাংক দায়বদ্ধতার কারণে ইসলামী ব্যাংক এর যথাযথ অর্থনৈতিক সাপোর্ট না করায় এই ধরনের বড় মাঝারি ও ছোটসব ফ্যাক্টরীগুলো বসে যেতে শুরু করেছে।
সব কিছুকে আমাদের আবারো এর দিকটাকে ভালোভাবে পজিটিভ দিক বিবেচনা করে হলেও এর হাল ধরে রাখা উচিত।
এর জন্য সরকারের জোর ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
যথাযথভাবে এই গার্মেন্টস শিল্প মন্দা হলে ব্যাংকিং সেক্টর, ফেব্রিক্স এক্সসোরিজ, ডাইং, ফিনিসিং, কম্পোজিট, ইয়ার্ণ, স্পিনিং সকল খাত ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে।
এতে করে আমাদের দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে। শেষমেষ দোষটা সরকারেরই ঘাড়েই চাপবে। কেননা সফলতা ও বিফলতা দুটোর দায়ভারই তো রাষ্ট্র নায়কের।
তাই সবকিছুকে বিবেচনায় রেখে জাতীয় স্বার্থে অন্তবর্তী কালীন সরকারের এই খাতে যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করে।