নিজস্ব প্রতিবেদন: দেশে প্রায় তিন কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাদের ৩৪ শতাংশ রয়েছেন দৃষ্টি হারানোর ঝুঁকিতে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে তাদের দুটি চোখই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সঠিক চিকিৎসা না হলে তারা দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন। বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির এক জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য।
২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত দেশের আট বিভাগে এই জরিপ চালানো হয়। জরিপে উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নেওয়া ১০ হাজার ডায়াবেটিক রোগীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ১০০ জনের মধ্যে ৩৪ জন রেটিনোপ্যাথি রোগে ভোগেন। রোগটি রেটিনার রক্তনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সাধারণত এতে দুই চোখই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সঠিক চিকিৎসা না হলে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে। এক পর্যায়ে রোগী দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। নারীর তুলনায় পুরুষরা এতে আক্রান্ত হন বেশি।
দেশে ডায়াবেটিসজনিত অন্ধত্বের হার কত জানতে এ জরিপ চালানো হয়। জরিপে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম। সমকালকে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সারাবিশ্বে অন্ধত্বের প্রধান কারণ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। বাংলাদেশেও উদ্বেগজনক হারে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বাড়ছে। ৯২ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে মানুষ মোটেও এ ব্যাপারে সচেতন নয়।’
চিকিৎসকরা জানান, রেটিনোপ্যাথির চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। দুই ভাবে এ রোগের চিকিৎসা হয়। প্রথম দিকে শনাক্ত হলে, ইনজেকশনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। প্রতিটি ইনজেকশনের দাম ৬ হাজার টাকা। দীর্ঘদিন এ ইনজেকশন নিতে হয়। এছাড়া লেজার থেরাপির মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা হয়। এটিও বেশ ব্যয়বহুল। ফলে রেটিনোপ্যাথি হলে অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে পারেন না বহু মানুষ।
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির তথ্য বলছে, দেশে প্রায় ৩ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ চিকিৎসকের কাছে আসেন কোনো না কোনো জটিলতা নিয়ে। দীর্ঘদিন রক্তে শর্করা অনিয়ন্ত্রিত থাকায় ৬০ শতাংশ রোগী হৃদরোগ, স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা, কিডনি, চোখের সমস্যা ও পায়ে পচনের সমস্যায় ভোগেন। অথচ দেশে ডায়াবেটিস আক্রান্তের চিকিৎসার ভালো ব্যবস্থা নেই। সরকারি হাসপাতালে ৮০ হাজার শয্যার মধ্যে ডায়াবেটিক রোগীর জন্য রয়েছে মাত্র ১২২ শয্যা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন ৩১২ জন।
এমন পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিক দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘সুস্বাস্থ্যই হোক আমাদের অঙ্গীকার’। দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘দ্রুত নগরায়ণ, জীবনযাপনের ধরন বদল ও কায়িক পরিশ্রম কমে যাওয়ায় ডায়াবেটিস আক্রান্তের হার বাড়ছে। সারাবিশ্বে স্বাস্থ্য খাতে মোট বরাদ্দের ১০ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে। অনেক দেশে সরকার এ ব্যয় বহন করে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে।’
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান বলেন, ‘ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী যদি ধূমপায়ী হন তা হলে তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি ২৫ শতাংশ বেশি। তাই ডায়াবেটিসজনিত অন্ধত্ব এড়াতে নিয়মিত রেটিনা পরীক্ষা জরুরি। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে রক্তচাপ এবং ওজন।’
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ডা. একে আজাদ খান মনে করেন ডায়াবেটিসজনিত অন্ধত্বের মহামারি রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চললে এবং পরিমাণ মতো ওষুধ গ্রহণ করলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব।