গোবিন্দগঞ্জ( গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া ও বাঙ্গালী নদীতে পানি
বেড়েছে। ফলে নদীতীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসল ডুবে গেছে, বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। সেই সাথে নদীর তিন-চারটি
পয়েন্টে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
যে কোন মুহূর্তে বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তৃর্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
গত ৫/৬ দিনের টানা বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে করতোয়া-বাঙ্গালী নদীর পানি হু হু করে বেড়ে যাওয়ায় নদী, খাল-বিল, জলাশয় বন্যার পানিতে ভড়ে গেছে। নদীতীরবর্তী কোন কোন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে আখ, ধান, কলা, পটল, আগাম সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের
ক্ষেত ডুবে গেছে, বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় বাড়িঘর, জিনিষপত্র রেখে কুঠিবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও উচু কোন স্থানে ১০/১২টি পরিবার আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এদিকে উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের বালুয়া ও বোচাদহ এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একাধিক স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে
বোচাদহ এলাকায় প্রায় ৬শ’ মিটার অংশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
পার্শ্ববর্তী খালবুরুজ ইউনিয়নের বিষপুকুর এলাকাতেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।
ওই এলাকার বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, যে কোন মূহুর্তে বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তৃীর্ণ ফসলি জমি ও
বাড়িঘর তলিয়ে যেতে পারে।
ভাঙ্গন কবলিত এলাকার লোকজন অভিযোগে জানান, দীর্ঘদিন ধরে করতোয়া বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধটির কয়েকটি অংশ ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ড তা সংস্কারের কোন উদ্যেগ গ্রহণ করেনি।
বন্যার সময় জরুরী ভিত্তিতে কিছু বালু ভর্তি বস্তা ফেলা হলেও স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
এ কারণে প্রায় প্রতিবছরই বাঁধ ভেঙ্গে নদীর পানি ঢুকে পড়ায় স্থানীয়রা চরম ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী ও কার্যকরী
পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে বাঁধ ভেঙ্গে মহিমাগঞ্জ, কোচাশহর, শিবপুর, শালমারা ও রাখালবুরুজ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের শতশত একর জমির উঠতি আখ, কলা, আগাম সব্জি ও আমন ধানের আবাদসহ বিভিন্ন ফসল
এবং বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুর হক জানান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ ও
ঝুঁকিপূর্ণ কয়েকটি স্থানে জিও ব্যাগ নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে উপজেলার বিষপুকুর, বালুয়া, বোচাদহ পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন পরিস্থিতি রোধ করা হচ্ছে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়াামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ পরিদর্শন করে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নিক্ষেপ কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন।
বিষপুকুর এলাকার ভাঙ্গনঝুঁকিতে পড়া বাঁধের অংশে জিও ব্যাগ নিক্ষেপের আগে সেখানে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এসময় যে তিনি কোনো মূল্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি রক্ষা করতে পাউবো সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও অংশ নেয়ার আহ্বান জানান।