মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ ,বগুড়া প্রতিনিধিঃবগুড়ায় ডিবি (পুলিশের গোয়েন্দা শাখা) হেফাজতে হাবিবুর রহমান হাবিব (৪০) নামের এক আইনজীবীর সহকারীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাত পৌনে নয়টার দিকে বগুড়ার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত হাবিবুর রহমান শাজাহানপুরের রানীরহাট চকজোড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে এবং বগুড়া জজ কোর্টে আইনজীবী মো. মঞ্জুরুল হকের সহকারী (মহুরী) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এর আগে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শহরের জজ কোর্ট চত্বর থেকে তাকে আটক করে ডিবি পুলিশ।
হাবিবুরের স্বজনদের দাবি, পুলিশের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি মারা যান। তারা বলেন পুলিশের অমানবিক নির্যাতনেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে নির্যাতনের ঘটনাকে মিথ্যা বলে দাবি করছে জেলা পুলিশ। তাদের দাবি হাবিবুরকে আটকের পর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মারা যান।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আতিকুর রহমান বলেন, সন্ধ্যার ৬টা ৫৫ মিনিটে হাবিব নামে একজনকে ভর্তি করানো হয়। তার শ্বাস কষ্ট ও বুকে ব্যথা ছিল। অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে তাকে ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। পরে রাতে ওই রোগী মারা যান।
পুলিশ জানায়, প্রায় দশ বছর আগে শাজাহানপুরের জোড়া তালপুকুর এলাকায় বিপুল নামে এক কিশোরকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। সেই হত্যার চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিলেন হাবিবুর রহমান।
ওই হত্যার ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ছিলেন তার সৎ মা খুকি বেগম। কিন্তু গত ২ আগস্ট খুকি বেগমকে হত্যা করা হয়। ৪ আগস্ট বস্তাবন্দি তার মরদেহ উদ্ধার হয়। তবে ৮৫ বছরের এই বৃদ্ধার দুটি পা নিখোঁজ ছিল। একটি পা পাশের একটি পুকুরে পাওয়া যায়।
আর আরেকটি পা একই এলাকার একজনের বাড়ির সেফটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই বাড়ির এক নারীকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হলে তার দেয়া তথ্য মতে হাবিবুরের নাম উঠে আসে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে হাবিবুরকে আটক করে ওই নারীর সামনে নিয়ে আসলে হাবিবুর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এরপর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হলে রাতে মারা যান তিনি।
হাবিবুর রহমানের সহকর্মী রাকিব জানান, সন্ধ্যায় কোর্ট থেকে তারা একসাথে বের হন। প্রধান ফটকের সামনে কয়েকজন তাকে আটক করে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
এরপর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে আমাদের উকিলকে জানানো হলে খবর নিয়ে জানা যায় ডিবি পুলিশ হাবিব ভাইকে ধরে নিয়ে গেছে। এর কিছুক্ষণ পর আবার খোঁজ আসে হাবিব ভাই মারা গেছেন। তখন আমরা মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে আসি।
আইনজীবী মঞ্জুরুল হক বলেন, হাবিবকে সন্ধ্যার দিকে সাদা পোশাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় এমন খবর দেওয়া হয়। কিন্তু তখন আমরা জানতে পারিনি তারা পুলিশ ছিল। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ খবর করে জানতে পারি ডিবি পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে। খবর পেয়ে আমরা ডিবি পুলিশ কার্যালয়ের সামনে যাই। তারপর এশার নামাজের পর আরেক অ্যাডভোকেট ফোন করে জানান হাবিব মারা গেছে।
এদিকে হাবিবুর রহমানকে হত্যা দাবি করে এই ঘটনায় উপযুক্ত বিচারের দাবি জানান বগুড়া জেলা আইনজীবীর সহকারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, আজকে যাকে হত্যা করা হয়েছে তিনি আমাদের সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক।
তাকে কোর্ট চত্বর থেকে বিনা ওয়ারেন্টে, বিনা এজাহারে কোনো মামলা না থাকার পরেও সন্দেহজনক ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়। তার কোনো চিকিৎসা পর্যন্ত করা হয়নি। কারণ তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আমি এই হত্যাকা-ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, বেশ কিছু দিন আগে জোড়া তালপুকুর এলাকায় খুকি বেগম নামে এক বৃদ্ধা খুন হন। তার দুই পা খ-িত ছিল। একটি পা পাওয়া যায় পাশের একটি পুকুরে।
আরেকটি পা ওই এলাকার একজনের বাড়ির সেইফটি ট্যাংকি থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই বাড়ির নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়। তার কাছে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ সন্ধ্যার দিকে হাবিবুর রহমানকে আটক করে। তাকে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়ার কিছু পরে অসুস্থ বোধ করে।
পরে তাকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাবিব মারা যান।
স্নিগ্ধ আখতার আরও বলেন, তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। কারণ তাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদের কোনো সময়ই পাওয়া যায়নি। তারপরেও এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত করলেই আসল বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।