মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ ,বগুড়া প্রতিনিধি: বিএনপি-জামায়াত আহুত টানা ৭২ ঘন্টা অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার বগুড়ার মহাসড়ক ও সড়কগুলো ছিল ফাঁকা। ব্যস্ততম ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক, বগুড়া-নাটোর মহাসড়ক, বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়ক যানবাহন শূন্য ছিল। মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে পিকেটিং করেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এসময় বনানী, লিচুতলা, মাটিডালী, চারমাথা ও গোকুল, বাঘোপাড়া এলাকায় আ’লীগ ও পুলিশের সাথে অবরোধকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, কমপক্ষে ১ টি গাড়ী ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসময় পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটে কমপক্ষে ২০জন আহত এবং নাশকতা মামলায় ৪ জনকে আটক করা হয়।
কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন, আমীরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমানসহ নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে ৭২ ঘন্টার দেশব্যাপী রাজপথ, রেলপথ ও নৌ-পথ অবরোধের প্রথম দিনে বগুড়ায় মহাসড়কের ৫টি পয়েন্টে অবস্থান নেয় জামায়াত। মঙ্গলবার ভোর থেকে শহরের তিনমাথা, চারমাথা, সাবগ্রাম, মাটিডালি-নওদাপাড়া এবং বারোপুর এলাকায় জামায়াত-শিবিরের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান নিয়ে পিকেটিং করে। মহাসড়কে থেমে থেমে খন্ড খন্ড মিছিল করে। এসময় মহাসড়কে দূরপালার কোন যানবাহন চলাচল করেনি।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পিকেটিং চলাকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বগুড়া শহর শাখার আমির অধ্যক্ষ আবিদুর রহমান সোহেল প্রতিটি অবস্থানস্থলে উপস্থিত হয়ে নেতাকর্মীদের উৎসাহ দেন। এসময় তিনি বলেন, বিরোধী দলের শান্তিপূর্ন কর্মসূচীতে হামলা করে, বাসে আগুন দিয়ে বিরোধী দলের উপর দায় চাপানোর পুরনো খেলায় মেতে উঠেছে আওয়ামীলীগ। কিন্তু জনগণ সফল হরতাল এবং আজকের স্বতস্ফুর্ত অবরোধ পালনের মাধ্যমে সরকারকে লালকার্ড দেখিয়ে দিয়েছে। এই সরকার যতদ্রুত বিদায় নিবে ততই দেশের জন্য কল্যাণকর। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের সময় ফুরিয়ে এসেছে। তিন দিনের অবরোধেও সরকার পদত্যাগ করে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে আরও কঠোর কর্মসূচীর দিয়ে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।
তিনি স্বতস্ফুর্তভাবে অবরোধ পালন করায় বগুড়াবাসীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। এসময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন জামায়াত নেতা আব্দুল হামিদ বেগ, আজগর আলী, শাহিন মিয়া, এনামুল হক রানা, শহর শিবির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন প্রমূখ। সকালে সদরের মাটিডালী বিমানমোড়ে জেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশার নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান নেন। এসময় তারা অবরোধের সমর্থনে মিছিল ও সমাবেশ করেন। সকালে মাটিডালী ও এরুলিয়া এলাকায় শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের ৩টি বাস ভাংচুর করলে আহত হয়েছেন অন্তত ৫জন যাত্রী। বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইহান ওলিউলাহ বলেন, অবরোধকারীদের শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের ৩টি বাস ভাংচুর করেছে।
দুপুর আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার বাঘোপাড়া এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে এজেআর নামের একটি কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ীতে আগুন দেয়া হয়েছে। এতে গাড়ির সামনের অংশ পুড়ে যায়। পরে আগুন ভিতরে ছড়িয়ে গেলে গ্রাহকদের মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের একটি দল আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বগুড়া জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম বলেন, বাঘোপাড়া এলাকায় অবরোধকারীরা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করলে গাড়ির সামনের অংশ পুড়ে যায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু ও জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনার নেতৃত্বে সকাল থেকে শহর বিএনপির ৮টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা বনানী এলাকায় অবস্থান নেন। এসময় তারা মহাসড়কে মিছিল ও পিকেটিং েেকরন। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের বনানী বাইপাস এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় উত্তেজিত জনতা তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়াসহ কয়েকটি ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন ভাঙচুর করে। বনানী বেতগাড়ী এলাকায় শাজাহানপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন সান্নুর নেতৃত্বে অবরোধ বিরোধী মিছিল বনানী লিচুতলা এলাকায় গেলে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এসময় তিনটি মোটরসাইকেলে কে বা কারা অগ্নিসংযোগ করে । ককটেল বিস্ফোরণ সহ ট্রাক ভাঙচুর করে। এ ঘটনার পর সন্দেহভাজন ২জনকে আটক করে পুলিশ। এসময় বিএনপির ১০জন নেতাকর্মী ছাড়াও পুলিশের রাবার বুলেটে একুশে সংবাদ পত্রিকার বগুড়া প্রতিনিধি ওয়াশিম রেজা (৩৫) আহত হয়েছেন। সদরের গোকুল ও বাঘোপাড়া এলাকায় সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহমেদ খান রুবেলের নেতৃত্বে মহাসড়কে অবস্থান করেন নেতাকর্মীরা। এসময় তারা অবরোধের সমর্থনে মিছিল ও েিপেকটিং করেন।
সেখানে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১০জন আহত হয়। এ ছাড়া মহাসড়কের ৩মাথা, ৪মাথা, সাবগ্রাম, বারবাকপুরসহ বিভিন্ন স্থানে পিকেটিং করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে বগুড়া জেলায় ৪ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়। তারা সকাল থেকেই মহাসড়কে টহল দেয়। বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা মহাসড়কে আটকে পড়া যানবাহন বগুড়া জেলা পার করে দিয়েছে। বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, ‘পুলিশের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই।
এদেশের মানুষ মুক্তি চায়। সে কারণে তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদ বলেন, ‘অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এদিকে, নাশকতা মামলায় ধুনটে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবকদলের ২ নেতাকে সোমবার রাতে নিজ নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপর দিকে, শহরের সাতমাথায় শান্তি সমাবেশ করেছে জেলা আ’লীগ। জেলা সভাপতি মজিবর হরমান মজনু, সাধারন সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু এমপি সহ দলের নেতৃবৃন্দ সমাবেশে বক্তব্য দেন।