জয়যাত্রা ডেক্স :ঈদ ঘিরে বাস-ট্রেনের আগাম টিকেট পাওয়া কঠিন ঠেকছে অনেকের কাছে; আর এই সুযোগে টিকেট লেনদেনের নামে ফেইসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে চলছে প্রতারণাও।
এসব গ্রুপে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেনের টিকেটের বিজ্ঞাপন বেশি। অন্যান্য গন্তব্যের ট্রেনের টিকেটও আছে, তবে সংখ্যায় কম। আছে বাসের টিকেট বিক্রির ঘোষণাও। গ্রুপে অনেকে টিকেট কেনার প্রত্যাশার কথা জানিয়েও পোস্ট দিচ্ছেন।
ফেইসবুকে দেখা গেছে, ‘অনলাইন ট্রেন টিকেট (টিকেট বাজার)’, ‘টেনের টিকেট ক্রয়/বিক্রিয়’, ‘অনলাইন টিকেট বাজার’, ‘অনলাইন ট্রেন টিকেট’, ‘অনলাইনে ট্রেন টিকেটের তথ্য’ নামে বিভিন্ন গ্রুপে ট্রেনের বিক্রির কথা বলা হচ্ছে।
এসব গ্রুপে অনেকেই টিকেট কিনতে চেয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। সেখানে একটা বড় অংশ আছেন- যারা টিকেট কিনেছেন, কিন্তু যেতে পারছেন না। টিকেট বিক্রি করে দেওয়ার জন্য ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। এ ধরনের ব্যক্তি টিকেটের ছবিসহ পোস্ট দিচ্ছেন।
আরেক শ্রেণির পোস্টদাতা আছেন- যারা যেকোনো গন্তব্যে যেকোনো ট্রেনের যেকোনো টিকেট পাইয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। এই শ্রেণির পোস্টদাতারাই প্রতারণায় জড়িত বলে অভিযোগ উঠছে।
‘অনলাইন ট্রেন টিকেট (টিকেট বাজার)’ নাম একটি গ্রুপে শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টায় নুহায়েল শিশির নামে একটি আইডি থেকে ২৮, ২৯ ও ৩০ মার্চের ঢাকা থেকে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের টিকেট বিক্রির পোস্ট দেওয়া হয়েছে।
ওই পোস্টে বলা হয়েছে, “২৮, ২৯, ৩০ তারিখ ঢাকা থেকে দিনাজপুর /ঠাকুরগাও/পঞ্চগড় টিকেট আছে। দেখা করে/এডমিন ডিল করেও নিতে পারবেন।”
নুহায়েলের মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে জানানো হয়, যেকোনো টিকেট দেওয়া যাবে।
৩০ মার্চের দিনাজপুর পর্যন্ত ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার দুটি টিকেট দেওয়া যাবে কি না, জানতে চাইলে বলা হয়, একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে স্নিগ্ধা শ্রেণির টিকেট দেওয়া যাবে। পঞ্চগড় পর্যন্ত সিট নেওয়া আছে, প্রতি সিটের ভাড়া দিতে হবে ২০০০ টাকা। একতা এক্সপ্রেসে ওই দুরত্বের ভাড়া ১৪২১ টাকা।
এত টিকেট কোথায় পান- জানতে চাইলে নুহায়েল শিশির বলেন, “এত টিকেট কেমনে হল ভাই? আমি ৩০ তারিখের ৩টা পাইছি। আর বাকিগুলা আরও অনেকে মিলে করতেছি ভাই।”
এমডি সাব্বির রহমান নামে আরেকজন দিনাজপুর পর্যন্ত কয়েকটি টিকেট বিক্রির জন্য পোস্ট দিয়েছেন।
ফেইসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করলে সাব্বির বলেন, “২৯ বা ৩০ মার্চ যাই নেন, দিনাজপুর পর্যন্ত শোভন চেয়ার শ্রেণির প্রতি টিকেটের ভাড়া এক হাজার টাকা করে।”
যদিও ঢাকা থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত সব ট্রেনের শোভন চেয়ার শ্রেণিতে ভাড়া ৬৩০ টাকা।
আবুল হাসান আজহারি নামে আরেকটি আইডি থেকে বলা হয়েছে, “আসসালামুআলাইকুম। ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটের ট্রেনের টিকিট লাগলে ইনবক্সে যোগাযোগ করুন। ঢাকা থেকে সকল রুটের ট্রেন টিকেট দিতে পারব ইনশাআল্লাহ…।”
তবে আবুল হাসান আজহারির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে কোনো সাড়া দেননি।
টিকেট বিক্রির নামে অনলাইনে সক্রিয় হয়েছে প্রতারকচক্রও।
শুক্রবার সকালে ট্রেন ও বাস টিকেট ক্রয়-বিক্রয় সেবা নামে আরেকটি ফেসবুক গ্রুপে নাজমুল ইসলাম প্রিন্স নামে একটি আইডির করা পোস্টে যেকোনো জায়গার টিকেট প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। সঙ্গে মোবাইল নম্বর ০১৪০৩৪১৬**** নম্বর দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার সকালে ওই নম্বরে যোগাযোগ করে ৩০ মার্চ ঢাকা থেকে রংপুরের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার চারটি টিকেট কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই নম্বর থেকে জানানো হয়, প্রতিটি টিকেট ১৩০০ টাকা করে দিতে হবে। সঙ্গে ০১৮১৯৮৮**** নম্বরে টাকা বিকাশ করতে বলা হয়।
ওই নম্বরে প্রথমে একটি টিকেটের টাকা পাঠালে ওই প্রতারক বলেন, “ভাই আপনার আসেনি। ব্যাক গেছে। আরেকটা নম্বর দিচ্ছি। ০১৯৯০৩**** নম্বরে টাকা পাঠিয়ে আমাকে স্ক্রিনশট দিন।”
তবে বিকাশ অ্যাপ থেকে টাকা পাঠানোর অপশনে গেলে ‘এই একাউন্টে লেনদেনটি করা সম্ভব নয়’ দেখায়।
কিছুক্ষণ পর ওই প্রতারকের কাছ থেকে আর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। নম্বরে কল দিলেও আর ধরেনি। এক পর্যায়ে তা নম্বরটি ব্লক করে দেয়।
এই গ্রুপে রাকিবুল ইসলাম নামে আরেকজন পোস্টে বলেছেন, “আসন্ন যাত্রার সকল ট্রেনের এসি/ননএসি টিকিট দেওয়া হচ্ছে। আগ্রহী যারা অনুগ্রহপূর্বক ইনবক্সে মেসেজ দিন। ঢাকা, কক্সবাজার, রাজশাহী, নাটোর, সান্তাহার, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, রংপুর, কুড়িগ্রাম, চট্রগ্রাম, সিলেট, খুলনা। #বিঃদ্রঃ শতভাগ নিরাপত্তার সহিত টিকেট নিতে পারবেন!”
বাসের টিকেটের জন্যও বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে রংপুর পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহনের নন এসি বাসের ভাড়া ৮৬০ টাকা করে। এই গ্রুপে ইয়াসির আরাফাত অন্তর নামে একজন পোস্ট দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, “টিকেট বিক্রয়- শ্যামলী পরিবহ (নেগোশিয়েবল।”
ওই পোস্টের সঙ্গে দেওয়া মোবাইল নম্বরে কল দিলেও আর ধরেননি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট্কমকে বলেন, ঈদ সামনে রেখে প্রতারক চক্র ট্রেনের টিকেট নিয়ে প্রতারণা করছে। ট্রেনের টিকেট সব অনলাইনে দেওয়া হয়েছে। অন্য কোথাও টিকেট বিক্রির সুযোগ নেই। একজনের নামে টিকেট কিনে অন্য কারও কাছে বিক্রির সুযোগও নেই।
“আমরা মনে করি এগুলো সম্পূর্ণ প্রতারণামূলক। এসব লিঙ্ক, মোবাইল নম্বর ডিজিএফআই, এনএসআইকে দিয়ে দেব।”
কেউ বেশি টিকেট কিনে বিক্রি করতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে আফজাল হোসেন বলেন, “টিকেট বিক্রির শর্ত অনুযায়ী, একজনের টিকেট আরেকজনের কাছে হস্তান্তর করা যাবে না। এতে জরিমানা করার বিধান আছে।
“কেউ যেন অন্যের কেনা টিকেট দিয়ে ভ্রমণ করতে পারে, সেজন্য স্টেশনে চেকিংয়ের ব্যবস্থা করব আমরা। যার টিকেট তার কাছে না পেলে জরিমানা করব, টিকেট বাতিল করবে দেব।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, “সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট অনলাইন মাধ্যমে টিকিট কেনাবেচা হয়ে থাকে। এর মধ্যে আবার কিছু প্রতারক চক্র সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে টিকিটের লোভনীয় প্রস্তাব দেয়।
“এসব ব্যাপারে আমাদের সাইবার ইউনিট সজাগ রয়েছে। কাজ করছে। অপরাধীকে চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ সবসময় চেষ্টা করছে।”