জয়যাত্রা ডেস্ক :বাংলাদেশকে সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে জাপানঅর্থসংবাদ ডেস্ক২৯ মার্চ ২০২৩, ৯:১২ অপরাহ্ণলভ্যাংশ
তিন প্রকল্পের আওতায় ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে জাপান। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার ৫৬৭ কোটি ৫৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। এরইমধ্যে বাংলাদেশ ও জাপান সরকারের মধ্যে ঋণ চুক্তি সই হয়েছে। এ ঋণের সুদহারও কম। বুধবার (২৯ মার্চ) শেরে বাংলা নগর এনইসি সম্মেলনকক্ষে বাংলাদেশ সরকার ও জাপানের মধ্যে ঋণচুক্তি সই হয়।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব (ইআরডি) শরিফা খান। জাপানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন দেশটির রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনরি ও বাংলাদেশে জাইকার প্রধান প্রতিনিধি তোমোহিদি ইচিগুচি। ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ঋণে সার্ভিস চার্জ মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।
মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়নে জাইকার ঋণ
২০২৬ সালের মধ্যে ‘মাতারবাড়ি পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’-এর প্রথম পর্যায়ের নির্মাণ সম্পন্ন করতে কাজ করছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের আওতায় মাতারবাড়ি পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের কাজ এগিয়ে চলছে।
এ লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য প্রয়োজনীয় ২৮৮ দমমিক ২৩ একর জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। মাতারবাড়ি পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টটি এ বছরের ১০ মার্চ একনেকে অনুমোদিত হয়েছে।
প্রকল্পটির অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ (প্রকল্প সাহায্য) ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, সরকারি অর্থায়ন দুই হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ এবং নিজস্ব অর্থ দুই হাজার ২১৩ কোটি ২৫ লাখ। এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদকাল জানুয়ারি ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত। অনুমোদিত প্রকল্পে দুটি কম্পোনেন্ট রয়েছে।
বহুমুখী টার্মিনাল, কনটেইনার টার্মিনাল ও অন্যান্য কার্যক্রম চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও পোর্টের সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সড়ক সংযোগকারী ২৬ দশমিক ১ কিলোমিটার (চারলেন) মূল সড়ক, ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাঁধ-কাম-সড়ক ও ১৭টি সেতু নির্মাণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। এরইমধেই ঋণ চুক্তি সই হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রামে মহাসড়কে ৪৪ কোটি ডলার ঋণ
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যানজটমুক্ত ও বাধাহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সড়কের পাঁচটি স্থানে বাইপাস সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এ প্রকল্পে ৪৪ দশমিক ৩৬ কোটি ডলার ঋণ দেবে জাপান।
প্রকল্পের আওতায় পটিয়া, চন্দনাইশের দোহাজারী, সাতকানিয়ার কেরানীহাট, লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ও চকরিয়া। এরমধ্যে কেরানীহাট এলাকায় বাইপাসের পরিবর্তে ফ্লাইওভার নির্মাণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। এরইমধ্যে প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে বিস্তারিত জরিপের (ডিটেইল সার্ভে) কাজ চলছে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের আঞ্চলিক যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন করতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সেতু প্রতিস্থাপন, ইন্টারসেকশন, বাজার, লেভেল ক্রসিং, রিজিড পেভমেন্ট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।
এরইমধ্যে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কের চকরিয়া মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা সেতু, চন্দনাইশ গাছবাড়িয়া বরগুনী খাল সেতু, পটিয়া ইন্দ্রপুল সেতু, দোহাজারী শঙ্খ নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। চারটি সেতু নির্মাণে খরচ হবে সাতশ কোটি টাকা।
জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ক্রস বর্ডার নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (সিবিআরএনআইপি) প্যাকেজ সি-এর আওতায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চারটি পয়েন্টে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে।
জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রুটে রেলপথ নির্মাণ
প্রথমে চীন এ রেলপথে বিনিয়োগ করার চুক্তি করেছিল। তবে চীন সরে গেছে। এখন বিনিয়োগ করবে জাপান। প্রাথমিকভাবে ৩ দশমিক ২৫ কোটি ডলার ঋণ দেবে জাপান। প্রকল্পের আওতায় জয়দেপুর থেকে যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত ৮৫ দশমিক ৫২ কিলোমিটার এবং ঈশ্বরদী থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত ৭৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার- এ দুই ভাগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় জাইকা।
এলেঙ্গায় নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হবে। দুই অংশে সাতটি স্টেশন পুনর্নির্মাণ এবং ১৪টি স্টেশন সংস্কার করা হবে। ৬৬টি বড় ও ১৩৮টি ছোট সেতু নির্মাণ করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও নাটোরের ১০৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।
নাটোরে ভূমি মালিকদের এরইমধ্যে ৭ ধারায় নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৬ দশমিক ৬ ভাগ। প্রায় ৩৯৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। যার পুরোটাই সরকার দিয়েছে।
নিয়মতান্ত্রিক ব্যাংকিং সংকট ও মন্দার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে যাচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে। সর্বশেষ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২২-২০৩০ এ বৈশ্বিক গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি থাকবে ২ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি শতকের প্রথম দশকে যেখানে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর প্রবৃদ্ধি লক্ষণীয় ব্যাহত হতে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলো ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। ২০০০-২০১০-এর দশকে যেখানে এ অর্থনীতিগুলোর গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশ। আর্থিক খাতে যদি বৈশ্বিক সংকট তীব্রতর হয় কিংবা মন্দা দেখা দেয়, তাহলে এ দেশগুলোর অর্থনীতিতে আরো বড় ধাক্কা লাগতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যখন আর্থিক খাতে অস্থিতিশীলতার পূর্বাভাস দিচ্ছে, তখন বিশ্বব্যাংকও চলতি দশক নিয়ে তাদের শঙ্কার কথা জানায়।
উচ্চমূল্যস্ফীতি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব এবং বৈশ্বিক ঋণ বৃদ্ধিকে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে বিশ্বব্যাংক। দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে জাতীয় পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট নীতি গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছে ঋণদাতা সংস্থাটি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত, ঋণের পরিমাণ কমানোর ওপর নীতিনির্ধারকদের জোর দেয়া উচিত বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।
হিলি স্থলবন্দরে ছোলা কিনতে আসা পাইকার আইয়ুব আলী বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন মোকামে ক্রেতাদের চাহিদামতো বন্দর থেকে ছোলা কিনে সরবরাহ করে আসছি। বন্দরে ছোলার দাম কম থাকায় মোকামে বেশ চাহিদা ছিল। তবে এখন মোকামগুলোয় তেমন একটা ছোলার চাহিদা নেই। তার ওপর দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই কিনছে না।’
তিনি বলেন, ‘রমজান শুরু হয়ে যাওয়ায় ছোলা বিক্রি নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। অল্প ছোলা আমদানি হচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় দামও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ছোলা কিনে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে দাম বেশি হওয়ায় পুঁজিও বেশি লাগছে। সাধারণ মানুষকেও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।’
হিলি স্থলবন্দরে কর্মরত শ্রমিক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘রমজানকে ঘিরে বন্দর দিয়ে বেশি পরিমাণে ছোলা আমদানি শুরু হয়েছিল। এতে আমাদের আয়ও বেড়েছিল। বর্তমানে আমদানি কমে যাওয়ায় আমাদের আয়ও কমে গেছে। আগে যেখানে দিনে ৬০০-৭০০ টাকা আয় হচ্ছিল, এখন তা কমে ২০০-৩০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বন্দরের ছোলা আমদানিকারক ললিত কেশেরা বলেন, ‘ভারত থেকে আমদানি করে পড়তা পড়ে ৭৬-৭৭ টাকা। সেখানে দেশের বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছিল ৭২-৭৩ টাকা করে। এত লোকসানের কারণে আমদানিকারকরা ছোলা আমদানি কমিয়ে দিয়েছিলেন। তবে পুনরায় আমদানি বাড়ানো হয়েছে।’
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জাহাজের মাধ্যমে ছোলা আমদানি হতো। মুষ্টিমেয় বড় কিছু আমদানিকারক এ কাজ করত। কিন্তু ডলার সংকটে বড় বড় এলসি দেয়া বন্ধ। ফলে ওইসব দেশ থেকে ছোলা আমদানি হচ্ছে না। তবে রমজানকে ঘিরে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ছোলাসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের এলসিগুলো সব ব্যাংকই দিচ্ছে। আমদানিকারকরা ভারত থেকে ছোলা আমদানির জন্য এলসি খুলছেন। ছোলা দেশে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।’
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘রমজান মাসকে ঘিরে স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ছোলা আমদানি খানিকটা বেড়ে গিয়েছিল। তবে রমজান শুরুর আগে যেভাবে বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছিল সে তুলনায় এখন কম। আগে বন্দর দিয়ে ১০-১৫ ট্রাক ছোলা আমদানি হলেও বর্তমানে তা কমে তিন-পাঁচ ট্রাকে দাঁড়িয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গত সোমবার বন্দর দিয়ে ১৫টি ট্রাকে ৬৫৫ টন ছোলা আমদানি হয়েছে। আমদানীকৃত এসব ছোলা যেন দ্রুত দেশে বাজারজাত করতে পারেন, এজন্য কাস্টমসের পরীক্ষণ শুল্কায়ন শেষে দ্রুত ছাড়করণ নেয়ার সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ফেব্রুয়ারিতে ২১৮টি ট্রাকে ৮ হাজার ৮০ টন ছোলা আমদানি হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ১৮ কর্মদিবসে ১৯০টি ট্রাকে ৭ হাজার ১৯০ টন ছোলা আমদানি হয়েছে।’