মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ ,বগুড়া প্রতিনিধিঃ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সহ সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা সেজে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। সোমবার ভোর ৪টার দিকে গাইবান্ধার সাঘাটা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে আনা হয়। গত ৭ জুন বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেজে পুলিশকে বোকা বানিয়ে দুই হোটেল মালিকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয় একটি প্রতারক চক্র। ওই ঘটনার পর থেকে তদন্তে নামে পুলিশ। সোমবার ভোরে দুই জনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি সদস্যরা। পুলিশের দাবি, এই দুইজনই প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে একজন নাবালক। তার বয়স ১৬। অপর জন সাঘাটা উপজেলার গাছাবাড়ীর পশ্চিম পাড়ার মো. তুহিন মিয়া (৩৫)। তুহিনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা আছে। এসব তথ্য সোমবার দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করেন বগুড়া ডিবির ইনচার্জ (পরিদর্শক) সাইহান ওলিউলাহ।
পুলিশ জানায়, ৭ জুন সকালে বগুড়া সদর থানার ডিউটি অফিসারের কাছে ইউএনও পরিচয় দেয় তুহিন। ফোনে তিনি বলেন শহরের নামাজগড়ে একটি সমস্যা হয়েছে। জরুরী ডিউটি পুলিশ লাগবে। ইউএনও পরিচয় পাওয়ার পর ফোন নম্বর দিয়ে উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত এএসআই জাহাঙ্গীর আলম নামে এক কর্মকর্তাকে যোগাযোগ করতে বলেন ডিউটি অফিসার। এএসআই জাহাঙ্গীর আলম সেই নম্বরে যোগাযোগ করলে তাকেও ইউএনও পরিচয় দেয় প্রতারক। ইউএনওর ভুয়া পরিচয়দানকারী ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে উপশহর এলাকার হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে দেয়ার নির্দেশ দেয়।
এমন নির্দেশনায় পুলিশ কর্মকর্তা হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিয়ে চলে যান। এরপর প্রতারক চক্রটি ভয়ভীতি দেখিয়ে শাহিন নামে এক হোটেল মালিকের কাছে থেকে ১০ হাজার টাকা ও রবিউল নামে আরেক হোটেল ব্যবসায়ীর কাছে হাতিয়ে নেয় ৬ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ঘটনাটি প্রতারণা বুঝতে পেরে পুলিশ সবাইকে সাবধান করে দেয়। আর জড়িতদের ধরতে তদন্তে নামে। এরপর একাধিক অভিযান পরিচালনা করে ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তারা।
ডিবির ইনচার্জ সাইহান ওলিউলাহ বলেন, গ্রেপ্তাররা সাধারণত মোবাইল ফোনে ইউএনও, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ অফিসার, ইউনিয়ন পরিষদের সচিবসহ বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নাম ও পদবী ব্যবহার করতেন। এতে তাদের প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কাজটাও সহজ হতো। তারা ময়মনসিংহ, শরিয়তপুর, জামালপুর, লক্ষীপুর, টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন এলাকায় এভাবেই প্রতারণার মাধ্যমে প্রচুর অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। বগুড়ার সদরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে ১১ জুন সদর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। তাদের আদালতে পাঠানোও হয়েছে।
গত ১২ মে নন্দীগ্রামের ইউএনও পরিচয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে দেয়ার ব্যবস্থা করতে বলে প্রতারক। তার কথা মতো দুই হোটেল মালিকের সঙ্গে আলাপও করে দেন ওই থানার এসআই শরিফুজ্জামান। হোটেল মালিকদের মধ্যে আজিজ নামে একজন দুই হাজার টাকা বিকাশে দেন। ফেরদৌস নামে আরেক হোটেল মালিকও ১০ হাজার টাকা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে পুলিশ প্রতারণার বিষয়টি জেনে যায়। আর এসআই শরিফুজ্জামান হোটেল মালিককে সতর্ক করে দেন।