নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সব ধরনের দায়িত্ব পালনে প্রস্তুতি নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবি সদর দপ্তরে বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাহিনীটির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান।
তিনি জানান, সীমান্তে বন্ধ থাকা পাঁচটি কাজ চালুর অনুমোদন দিয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স)। বিএসএফের দক্ষতার অভাবে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। তবে আগের চেয়ে অনেক কমেছে। হত্যা বন্ধে দুদেশের সীমান্ত এলাকায় নন লেথাল (অমরণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার) নীতি অনুসরণ করা হবে।
ভারতের নয়াদিল্লিতে গত ১১ থেকে ১৪ জুন ৫৩তম বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে রামগড় স্কুল বিল্ডিংয়ের অসম্পন্ন কাজ; তিন বিঘা করিডোর এলাকায় ঝালংগী পকেট এবং ভিতরবাড়ি পকেট এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন; শেরপুরের ভোগাই নদীর তীর সংরক্ষণ; জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদী ও রহিমপুর খালের সংযোগস্থল পুনঃখনন এবং নেত্রকোনার ভবানীপুর সীমান্তে ১ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকাকরণের অনুমোদন দেওয়া হয় বলে বিজিবি মহাপরিচালক জানান।
সীমান্ত সম্মেলনের বিষয়ে তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় পাঁচটি কাজ চালুর অনুমোদন। এসব কাজ সীমান্তবর্তী জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।
মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান বলেন, সম্মেলনে মাদকপাচার, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানবপাচার, স্বর্ণ, অস্ত্র, জালনোট প্রভৃতি চোরাচালান রোধে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (কো-অর্ডিনেট বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান (সিবিএমপি) কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের ওপর উভয় পক্ষ থেকে গুরুত্বারোপ করা হয়। উভয় দেশের নাগরিকদের অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম রোধকল্পে এলাকায় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিজিবির ডিজি বলেন, জাতীয় নির্বাচন ঘিরে অর্পিত দায়িত্ব পালনে বিজিবি সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএসফের মাঠপর্যায়ে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের মোটিভেশন ও মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে। সে কারণে অনেক ক্ষেত্রে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। সীমান্ত হত্যায় বিজিবির চেয়েও বেশি অস্বস্তিতে পড়ে বিএসএফ। সীমান্তে নন-লেথাল নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি সম্মেলনে পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএসএফ। ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে রাত্রিকালীন যৌথ টহল বাড়ানো হবে।
সীমান্ত সম্মেলনের বিষয় তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার খায়রুল কবির বলেন, ভারতে বসবাসকারী বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে। সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক সন্দেহভাজন ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিজিবি ও বাংলাদেশের অন্যান্য বাহিনীর নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উভয় পক্ষ দুই দেশের টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সুবিধা ব্যবহার করে সীমান্তে সংঘটিত অপরাধ রোধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করতে একমত হয়েছে। এ ছাড়া ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী ও জঙ্গি গোষ্ঠীর অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য দিয়েছে বিজিবি। এ ব্যাপারে বিএসএফ সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে। অপরদিকে বিএসএফ মহাপরিচালক ড. সুজয় লাল থাওসেনের নেতৃত্বে ভারতের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেন।