নেত্রকোণা প্রতিনিধি ঃ নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলায় দরবেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন এ বিদ্যালয়ের জমি দাতা সদস্য।
৭৭ নং দরবেশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঐ প্রধান শিক্ষকের নাম বিলকিস আক্তার। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭২ জন এবং প্রধান শিক্ষক বিলকিস আক্তার সহ শিক্ষকের সংখ্যা ৭ জন বিদ্যালয়টি ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এলাকার ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য মোঃ মোখলেছুর রহমান ১৩ জুন মঙ্গলবার ২০২২ তারিখে নেত্রকোনা আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়াও ২০২৩ সালের ৫ই জুন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবরে একটি অভিযোগ দেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও সহাকরী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পিযুষ কান্তি মজুমদারসহ তিনজন প্রধান শিক্ষককে হাত করে এই স্কুলের বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীর সাথে জরীত।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন যে এলাকার বিতর্কিত ব্যক্তিদের পরামর্শ নিয়ে নিজের পছন্দের লোকজনদের দ্বারা বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করেন।
এ বিষয়ে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি, মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক প্রতিনিধি, স্থানীয় ইউপি সদস্য প্রতিনিধি ও জমি দাতা সদস্য সহ বর্তমান কমিটির কারো মতামত কে গুরুত্ব না দিয়ে সেচ্ছাচারী আচরন করেন।
উল্লিখিত তিনজন উপজেলা প্রশাসনের বরাদ্দকৃত নদী খননের মাটি আর্থিক দূর্নীতির মাধ্যমে ২ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহনের মাধ্যমে অন্যত্র বিক্রি করে দেন। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্থক্ষেপে নদী খননের নামমাত্র মাটি বিদ্যালয়ের অর্থ ব্যয় করে স্কুল প্রাঙ্গনে আনতে বাধ্য হন।
এছাড়াও বিগত প্রায় পাঁচ অর্থ বৎসরের সরকারি অনুদানের টাকা তার পছন্দমত লোকদের নিয়ে খরচ করে মিথ্যা ও বানোয়াট বিল ভাউচার জমা প্রদান করেন।
প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষর জ্ঞানহীন লোকদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে নিজের মনগড়া রেজুলেশন তৈরি করে সেখানে তাদের সহি স্বাক্ষর নিয়ে নেন। দাতা সদস্য এসব বিষয়ে হিসাব চাইলে প্রধান শিক্ষক তা দিতে বাধ্য নন বলে সাফ জানিয়ে দেন। এছাড়া প্রধান শিক্ষক বিলকিস আক্তার গত ৭ বছর যাবত শিক্ষার্থীদের উপ-বৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করে আসছে।
বর্তমানে স্কুলের একাডেমিক অবস্থা খুবই খারাপ। সময় মত শিক্ষকরা স্কুলে উপস্থিত না হওয়ায় বিদ্যালয়ের পাঠদান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। নিয়মিত জাতীয় সংগীত সহ অন্যান্য শিক্ষার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতির হার প্রায় অনেক কমে গেছে।
বিদ্যালয়টিতে সবাই মহিলা শিক্ষক যারা শিক্ষার্থীদের পাঠদানে মনোনিবেশ না করে পারিবারিক সাংসারিক আলাপ আলোচনা করে সময় কাটাচ্ছে। প্রধান শিক্ষক দূর্নীতির সাথে যুক্ত থাকায় তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসব কাজে হস্থক্ষেপ না করায় বিদ্যালয়টির সার্বিক অবস্থা খুবই নাজুক।
এটিও পিযুষ কান্তি মজুমদার বলেন এই অভিযোগ ইউএনও স্যার বরাবরে দেওয়া হয়েছে ইউএনও স্যার বলতে পাবেন। এ বিষয়ে কথা বলতে নেত্রকোনা আটপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সেলিমা আক্তার খাতুন এর সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার মোবাইল ফোনে বারবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
দরবেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিলকিস আক্তার বলেন, ইউএনও স্যারের কাছে তদন্ত রিপোর্ট আছে তিনি বলতে পারবেন।
৭৭ নং দরবেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দাতা সদস্য মোঃ মোখলেছুর রহমান বলেন, আমি এই নিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দূর্নীতির অভিযোগ এনে এই নিয়ে কয়েকবার আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তারা বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে। পরে নিরুপায় হয়ে আমি তাদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ দিতে বাধ্য হয়েছি। তিনি আরো জানান এই বিষয়ে কোন ব্যবস্থা না উচ্চতর আদালত সহ দূর্নীতি দমন কমিশন ও প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিতে বাধ্য হব।