শামীম আহসান মল্লিক, বাগেরহাট প্রতিনিধি ঃ
ঢিলে ঢালা ভাবে চলছে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট জাতীয় গোল্ডকাপ ২০২৩ ইং এর মোরেলগঞ্জ উপজেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ছাড়াই খেলা শুরু হয়েছে।
সোমবার (২৩জুলাই) সকালে থেকে মোরেলগঞ্জ পৌরসভা সহ ১৬টি ইউনিয় ও ১ টি পৌরসভা বিভিন্ন ইউনিয়ন কেন্দ্র গুলোতে কোন প্রকার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই শুরু হলো এই জনপ্রিয় ফুটবল প্রতিযোগিতা।
এ টুর্নামেন্ট দেশে ফুটবলের বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সাম্প্রতিক দেশের মেয়েরা ফুটবল খেলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দেশের মর্যাদা বাড়িয়েছে। পাশাপাশি সুস্থ দেহে সুন্দর মন অর্জন এবং তরুণদের মাদক থেকে দূরে রাখার জন্য এই সরকারের এই মহতি উদ্যোগ।
আর সরকারের উদ্যোগকে ভেস্তে পাঠিয়ে দিলেন মোরেলগঞ্জ উপজেলার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। এমনটি হয়েছেন নিজ ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করা, খামখেয়ালিপনা, সরকারি নিয়মের কোন তোয়াক্কা না করা এবং অতিমাত্রায় স্বজনপ্রীতি করার কারণে এমনটি হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক শিক্ষক অভিভাবক বৃন্দ।
ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে খেলাটি পরিচালনার কথা থাকলেও সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজ ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করলেন তিনি।
গত দুই দিন মূল ভেনু অম্বিকা চরণ লাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলা খেলা কমিটির সদস্য সচিব ও ভেনু অম্বিকা চরণ লাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের খেলা পরিচালনা কমিটির আহবায়ক উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুস্তাফিজুর রহমান কাগজে-করমে থাকলেও বাস্তবে তিনি কোন প্রকার কারন ছাড়াই দুই দিন অনুপস্থিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি ছুটিতে আছেন। ছুটির ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি তাকে কোন ছুটি দেয়নি। এমন কি ছুটি চায়নি। কমিটের ২০ জন সদস্যের মধ্যে অনেকেই ছিলো অনুপস্থিত।
কোন প্রকার সাজ সাজ্জা নেই, কোন উৎসাহ উদ্দীপনা নেই, প্রাণ চঞ্চলতা, দায়সারা ভাবে চলছে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৩।
কথা হয় উপজেলার একাধিক শিক্ষকবৃন্দের সাথে ক্ষোভের সাথে বলেন, নিজেদের পকেট টাকা এবং আবার অনেকে চেয়ারম্যানদের কাছে ধর্না ধরে কিছু টাকা নিয়ে কষ্ট করে খেলা তুলছি। কিন্তু শিক্ষা অফিসার আমাদের সাথে অন্যায় করেছে। কথা বললেই শোকজ, বেতন বন্ধ, চাকুরী হারানোর ভয় ইত্যাদি মাথায় নিয়ে চলতে হচ্ছে।
ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারিভাবে ৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ থাকলেও আমাদের হাতে ৩ হাজার টাকা তুলে দেন। উপজেলা পর্যায়ে ৮ হাজার টাকা থাকলেও ৬ হাজার টাকা তুলে দেন।
এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হওয়ার পরে পরিবেশ বেগতিক দেখে দুই এক জন শিক্ষককে ডেকে এনে কিছু টাকা ফিরিয়ে দেন।
চাপের মুখে শিক্ষা অফিস ফাইনাল ফুটবল খেলার চিঠি করেন। কিন্তু সেখানে ছিলোনা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের লোগো, মুজিব বর্ষের লোগো, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম এযেন দায়সারা মাত্র।
আগামী ৩১ জুলাই পৌরসভার প্রাণ কেন্দ্রে উপজেলার ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হবে। সেই চিঠিতে পৌরসভার মেয়র এ্যাডভোকেট মনিরুল হক তালুকদারের নাম পর্যন্ত লেখা হয়নি। এটা শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমানের একক সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে শিক্ষা অফিসের স্টাফ, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা কিছুই জানে না বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে সরকারি বরাদ্ধের টাকা থেকে কম দেওয়ার কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখন এটা দিয়েছি বাকিটা পরে দেব।”
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ ই আলম বাচ্চু ক্ষোভের সহিত জানান, “আমি উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা খেলা সম্পর্কে শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান এযাবৎ আমাকে কিছুই জানাননি। পাশাপশি মোরেলগঞ্জে কর্মরত সাংবাদিকদের ভাইদেরকেও এ ব্যাপারে জানানো হয়নি। ”
খেলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম তারেক সুলতান জানান, “আমি ট্রেনিং শেষে করে বিদেশ থেকে আসা মাত্র আমাকে বলে ৩১ জুলাই এমপি মহোদয় থাকতে পারবেন, সে অনুসারে ফাইনাল খেলার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া এ খেলা সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা।”
এ ব্যাপারে জেলার শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, এমন কর্মকাণ্ড আদৌ কারো কাম্য নয়। এত বড় মোরেলগঞ্জ উপজেলায় একজন সৎ এবং কর্মঠ শিক্ষা অফিসারের প্রয়োজন। বড় উপজেলা চালানোর জন্য একজন ভালো অফিসার প্রয়োজন। তার ব্যাপারে আমার কাছে প্রতিদিন বিস্তর অভিযোগ আসে। আপনারা পত্র-পত্রিকায় লেখেন তারপরে যদি কিছু হয়।”