শামীম রেজা ডাফরুল, গোবিন্দগঞ্জ(গাইবান্ধা)প্রতিনিধি:গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ জিনের বাদশা প্রতারক চক্রের দুই সক্রিয় সদস্যকে অর্থ, স্বর্নলংঙ্কারসহ গ্রেফতার করেছে ৷
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দিবাগত রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়৷ আজ ২৬ মে শুক্রবার দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ থানা চত্বরে জেলা পুলিশের পক্ষে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে গাইবান্ধা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইবনে মিজান এ তথ্য জানান।
গ্রেফতারকৃতরা হলো গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের দুলু মিয়ার ছেলে মোর্শেদুল ইসলাম (৩২) ও মালাধার কালি পাড়া গ্রামের রেজবর আলীর ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৫০)।
তাদের নিকট হতে স্বর্ণের বালা এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল এক জোড়া, স্বর্ণ সাদৃশ্য ইমিটেশনের গলার হার- ০১টি, রুপার নুপুর- এক জোড়া, নগদ আট হাজার টাকা প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৩ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয় ।
প্রেস ব্রিফিংকালে জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার উদয় কুমার সাহা, থানার অফিসার ইনচার্জ ইজার উদ্দিন, পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত বুলবুল ইসলাম, এসআই সুজন কবির, এসআই রাশেদুল ইসলাম সহ অন্যান্য অফিসারবৃন্দ ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস বিফ্রিংয়ে পুলিশ সুপার জানায়, বগুড়া জেলার শাহজাহানপুর উপজেলার কাছা হার পাড়া রুপিহার গ্রামের মোঃ আব্দুল আলিম (৪৫), অনুমানিক ৩ সপ্তাহ পূর্বে রাত ১২ ঘটিকার পর হতে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে অজ্ঞাত নামা আসামীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর হতে বাদীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করে নিজেকে আল্লাহর অলী দরবেশ পরিচয় দিয়ে বলে যে, বাবা তোর ভাগ্যে বহু ধন-রতœ দেখা যাইতেছে।
তুই বড় ভাগ্যবান। তুই ছোট বেলা থেকে অনেক পরিশ্রম করছিস। তোর প্রাপ্য ধন-সম্পদ ৭ রাজার ধন আল্লাহর নির্দেশে ৭ শত জন জিন পাহাড়া দিতেছে। এই ধন-সম্পদ তুই যদি পেতে চাস, তাহলে তোকে আল্লাহর ওয়াস্তে মসজিদে কোরআন শরীফ, জায়নামাজ, টুপি দান করতে হবে।
এইভাবে উক্ত আল্লাহর অলী, দরবেশ বাদীর সাথে প্রতিনিয়ত গভীর রাতে মোবাইলে কথা বলতে থাকে এবং তাকে মূল্যবান ধন-সম্পদ পাওয়ার লোভ-লালসা দেখাতে থাকে।
দরবেশ পরিচয় ব্যক্তি আরো বলেন যে, বিকাশে ত্রিশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিলে কোরআন শরীফ, জায়নামাজ টুপি তোর নামে আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যাবে। সেই মোতাবেক বাদী আব্দুল আলিম গুপ্ত ধন-সম্পদ প্রাপ্তির আশায় আল্লাহর অলি দরবেশের দেয়াা বিকাশ নম্বরে স্থানীয় বিকাশ এজেন্ট থেকে পর্যায়ক্রমে ৪ বারে মোট ত্রিশ হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেয়।
এরপর মোবাইল ফোনে দরবেশ পরিচয় ব্যক্তি অত্র মামলার বাদীকে আরও বলে, বাবা তুই গুপ্ত ধন-সম্পদ পাইতে চাইলে আল্লাহকে খুশি করার জন্য কিছু স্বর্ণের গহনাও দিতে হবে এবং একটা মাটির খালি পাতিলে ৭টি চাল রেখে একটা ঢাকনা সহ সাদা কাপড় দ্বারা বেঁধে তোর ঘরের গোপন জায়গায় রাখতে হবে।
দরবেশ পরিচয় ব্যক্তি গত ৭ মে রাত্রি অনুমানিক ৮ ঘটিকায় বাদীকে ফোন করে স্বর্ণ অলংকারসহ উক্ত পাতিল গোবিন্দগঞ্জ থানাধীন ফুলবাড়ী ইউনিয়নে ফুটানী বাজারের কাছে একটি বৈদ্যুতিক পোলের নিকট গহনাপত্র রেখে আসতে বলে। বাদী তার কথামত আনুমানিক দুই লক্ষ টাকার গহনাপত্র রেখে আসে।
পরের দিন ৮ মে সকালে নিজের ঘরে রাখা মাটির পাতিল খুলে ৭টি চাল ছাড়া পাতিলে আর কিছুই দেখতে না পেয়ে ঘটনাটি গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিকে জানায়। উক্ত ঘটনার অভিযোগের ভিত্তিতে অত্র মামলাটি গোবিন্দগঞ্জ থানায় রুজু করা হয়।
এ ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানার পুলিশ বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে অভিযান চালিয়ে উক্ত জ্বীনের বাদশা প্রতারকচক্রের দুই সদস্যকে রাত আড়াইটার দিকে গ্রেফতার করে এবং তাদের নিকট হতে উল্লেখিত স্বর্ণ অলংকার উদ্ধার করা হয়।