রবিউল ইসলাম, ঝিনাইদহ:দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশের ন্যায় ঝিনাইদহ-৪ নির্বাচনী এলাকায় প্রস্তুতি শুরু করছেন প্রার্থীরা। এই আসন এক সময় বিএনপির শক্ত ঘাটি থাকলেও ২০০৮ নির্বাচনে এই আসনটি হাতছাড়া হয়ে যায়।
আওয়ামীলীগের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের কছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হন বিএনপির প্রার্থী শহিদুজ্জামান বেল্টু।
২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারুল আজীম আনার নির্বাচিত হবার পর থেকে এই আসনটি আওয়ামী লীগের দূর্গ হিসাবে গড়ে ওঠে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সাথে বন্ধুর মতো মিশে যাবার কারণে তাকে সবাই আপন করে নিয়েছেন কারোর বিপদের কথা শুনলে তিনি ছুটে যান তাদের পাশে।
ঝিনাইদহ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাম্ভব্য প্রার্থীর সংখ্যা ডজনখানেক। আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আছেন বর্তমান সাংসদ আনোয়ারুল আজীম আনার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিকী ঠান্ডু, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা ইসরাইল হোসেন, কেন্দ্রীয় বাস্তহারালীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জেল হোসেন বাবু, উপজেলা আওয়ামীলীগের নব-গঠিত কমিটির সাধারন সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন খান, প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান পত্নী মিসেস শামীম আরা মান্নান, কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ রাশেদ শমসের, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের নতুন কমিটির যুগ্ন-সাধারন এ্যাড. মতিয়ার রহমান মতি, জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু, আমেরিকা বাংলাদেশ কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এবিসিডিআই) প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া অনু, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের দপ্তর সম্পাদক ও বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য কাজী নাসিম আল মোমিন (রুপক) এবং সাবেক যুবলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার পারভেজ সাগর।
এই আসনের বড় দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপির সাম্ভব্য প্রার্থীরা। পাশাপাশি জামায়াত ইসলামীর দলের সাম্ভব্য প্রার্থীর সমর্থকদের সরব হওয়ার বিষয়টি তারা জানান দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। দলটির নেতা-কর্মিরা পোষ্ট দিচ্ছেন তাদের সাম্ভব্য প্রার্থীর ছবি সম্বলিত ব্যানার ফেষ্টুন।
তবে বড় বিরোধীদল বিএনপি প্রার্থীদের মূল লক্ষ্য এখন সরকার পতনের আন্দোলন। দলটি নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের লক্ষ্যে আন্দোলন করছেন।
তবে এই আসনে আরেকটি বড় দল বিএনপির সাম্ভব্য প্রার্থীরাও জোরেসোরে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করেছেন। বিএনপির দুইটি অংশে বিভক্ত হয়ে লবিং গ্রæপিংয়ে সক্রিয়। তাদের আলাদা অলাদা ভাবে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ বেশ লক্ষনীয়।
এই আসনে বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য এম. শহিদুজ্জামান বেল্টু, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারন সম্পাদক ও বর্তমাান স্বেচ্ছাসেবক দলের কেদ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ন সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের নির্বাহী কমিটির সদস্য হারুন অর রশিদ মোল্লা নিরপেক্ষ সরকারের দাবীতে আন্দেলন ও দলীয় মনোনয়ন পেতে চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে জামায়াত থেকে মাওলানা আবু তালেব ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন।
এ আসনে শেষ ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আনোয়ারুল আজিম আনার এমপি নির্বাচিত হন। আনোয়ারুল আজিম আনার জানান, আওয়ামীলীগ সব সময়ই জনগণের দল হিসাবে সরকার গঠন করেছে।
দেশ ও জনগণের উন্নয়ন করে সাধারন মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে দেশের মান মর্যাদা উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
গত সাড়ে ৯ বছরে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় বিশাল উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ শেষ করেছি। বাকি উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়া আমি সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকার প্রত্যান্ত অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে গিয়ে তৃর্নমুলের মানুষের কাছে গিয়ে সেবা দিয়ে আসছি।
নির্বাচনী এলাকার মানুষের সুখে দুখে আমি সব সময় পাশে থাকার চেষ্ঠা করি। এ আসনের জনগন আবারও আমাকে সংসদ সদস্য হিসাবে চাই। তাই তাদের চাওয়াকে পূরন করতে এবারও আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী।
আশা করি দলের নীতি নিধারকগন এবং জাতীর জনকের কন্য দেশরতœ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিবেন বলে আশা করি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সাধারন সম্পাদক এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবকদলের সিনিয়ার যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ জানান, এখন আমরা সরকার পতন এবং নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন অব্যহত রেখেছি। এরপর দল নির্বাচনে গেলে মনোনয়ন চাইবো।
গত ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আমি বিএনপির মনোনিত প্রার্থী ছিলাম। আমরা দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া ও আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে নিরেপেক্ষ সরকারের অধিনে সুষ্ট নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছি। সাথে সাথে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য সকল স্তরের সাংগঠনিক পুনর্গঠনের জন্য কাজ করছি। এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধিনে সুষ্ট নির্বাচন। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার সাথে দেশের উন্নয়নে কাজ করবো।
আগামী নির্বাচনে আশা করি আবারো আমাকে দলীয় মনোানয়ন দিবে। সুষ্ট নির্বাচন হলে জনগন ধানের শীষে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন বলে আশা রাখি।
কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ জানান, আমরা এখন সরকার পতন এবং নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন অব্যহত রেখেছি। আন্দোলন সফল হলে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।
আমরা এখন নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করছি না। আমরা এখন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে নিরপেক্ষ কমিশনের আওতায় একটি সুষ্ঠ্য নির্বাচনের লক্ষে আন্দোলন করছি।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে নেতাদের এবং ভোটারদের সমর্থন আদায়ে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে মাঠে নেমেছেন।
আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। তিনি জানান, আমি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত আছি।
এবার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনুরোধে নৌকার মাঝি হতে মাঠে নেমেছি। আমি এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশা করছি।
কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাাসিনার নেতৃত্বে আমরা দেশের উন্নয়নে কাজ করছি। বিগত দিনে আমি কালীগঞ্জ পৌর মেয়র হিসাবে সুনামের সাথে পৌর এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি।
দলের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দায়িত্ব সততার সাথে পালন করেছি। সব সময় চেষ্টা করি পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে গিয়ে সেবা করার। আসছে নির্বাচনে আমি দলীয় মনোনয়ন চাইবো। আমার বিশ্বাস দল আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচিত হয়ে জনগণের আশা আকাঙ্খা পুরনে সাধ্যমত চেষ্টা করবো।
ঝিনাইদহ-৪ আসন মুলত কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা এবং ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই আসনে বর্তমান মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮১ হাজার ৬২১ জন।
এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৭৫জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৩৯ হাজার ৮৪৬ জন।
# আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এক ডজন।
# বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী-৪ জন।
# জামায়াত ইসলামীর মনোনয়ন প্রত্যাশী-১ জন।