এম আর অভি, বরগুনা প্রতিনিধি: বরগুনার পাথরঘাটায় চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস নিখোঁজ মাদ্রাসা ছাত্র শিশু হাসিব(১৩) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণের মাস্টারমাইন্ড আব্দুল্লাহ আল নোমন জানান,
গত ২০ অক্টোবর. সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭ ঘটিকায় পাথরঘাটা পৌরসভাধীন প্রেসক্লাব সংলগ্ন দোকানের সামনে থেকে ভিকটিম নিহত মাদ্রাসা ছাত্র হাসিব কে ডেকে নিয়ে তার পাথরঘাটা পৌরসভাধীন ০১নং ওয়ার্ডস্থ ইমান আলী সড়কের ভাড়াটিয়া বাসায় নিয়ে সু-কৌশলে RC কোলার সাথে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে খাইয়ে অচেতন করে।
পরের দিন ২১ অক্টোবর সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭ ঘটিকায় নিখোঁজ হাসিবের মোবাইল নম্বর (০১৭৩৮-৯৫৩৯১৫) থেকে চট্টগ্রাম অবস্থানরত ভিকটিম হাসিবের চাচা মনিরাকে ফোন করে হাসিবের মুক্তিপণ দাবি করে।
কিন্তু মুক্তিপণের টাকা না দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে মর্মে টেরপেয়ে অপহরণকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিম হাসিব’কে হত্যার উদ্দেশ্যে হাত, পা বেঁধে মেঝেতে শুইয়ে ভিডিও চিত্র ধারণ করে এবং উক্ত ভিডিও ফুটেজ ভিকটিম হাসিবের চাচার ইমো নম্বরে পাঠিয়ে দেয়।
পরবর্তীতে হাসিবের গলায় নাইলনের রশি পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ ড্রামের মধ্যে ঢুকিয়ে কাঁথা দিয়ে পেচিয়ে লাশ গুম করার
উদ্দেশ্যে প্রথমে তার ভাড়াটিয়া বাসা থেকে আব্দুর রহিম এর অটোরিক্সা যোগে তার শ্বশুর বাড়ি হোগলাপাশা নিয়ে।
খড়ের গাধার মধ্যে লুকিয়ে রাখে। পরবর্তীতে সেখান থেকে ২২ অক্টোবর সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৫ ঘটিকায় গ্রেফতারকৃতরা পরস্পর যোগসাজোগে বিশখালী নদীর তীরে বাইনচটকি ওয়াপদার রাস্তার ডালের গর্তের মধ্যে পাতা দিয়ে ঢেকে রেখে আসে।
ভিকটিমের উদ্ধারকৃত লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত পূর্বক ময়না তদন্তের জন্য বরগুনা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানাগেছে, গত ২১ অক্টোবর সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭ ঘটিকায় নিখোঁজ হাসিবের মোবাইল নম্বর (০১৭৩৮-৯৫৩৯১৫) থেকে চট্টগ্রাম অবস্থানরত হাসিবের চাচা মনির এর মোবাইল ফোনে কল করে মুক্তিপণ বাবদ ৩,০০০০০/-(তিন) লক্ষ টাকা দাবি করে।
পাশাপাশি হাসির শারিরীকভাবে অসুস্থ বলে জানায়। তখন হাসিবের চাচা মনির অপহরণকারীর দেয়া বিকাশ নম্বরে (০১৭২৭-৯৭৭০৫ ) তে ৪,০০০/- (চার) হাজার টাকা হাসিবের চিকিৎসার জন্য পাঠায়।
বিষয়টি পুলিশ সুপার, বরগুনা মহোদয় অবহিত হওয়ার পরপরই যেহেতু এটি একটি চাঞ্চল্যকর মাদ্রাসা শিশুর ছাত্র, তাই এ সংক্রান্তে পাথরঘাটা থানার সাধারণ ডায়েরী নং- ৯৯১, তারিখ-২১ অক্টোবর তারিখে লিপিবদ্ধ করে অফিসার ইনচার্জ।
পাথরঘাটা থানা তদন্তভার এসআই(নিঃ)/মোঃ আলী হোসেন এর উপর অর্পণ করেন।
পরে একটি চাঞ্চল্যকর মাদ্রাসা শিশু ছাত্র নিখোঁজ, অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনা তাই তাৎক্ষনিকভাবে বরগুনা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোজাম্মেল হোসেন।
পাথরঘাটা সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এর নেতৃত্বে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখা অফিসার ইনচার্জ মোঃ বশির আলম, এবং পাথরঘাটা থানার একটি চৌকস টিম ভিকটিমকে উদ্ধার এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাথরঘাটায় প্রেরণ করা হয়।
উক্ত টিম পুলিশ সুপার, বরগুনার সার্বিক দিক নির্দেশনায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পাথরঘাটা থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান।
পরিচালনা করে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই মূল অপহরণকারী (১) আব্দুল্লাহ আল নোমন ওরফে তানভীর ওরফে শিশু ফকির(১৯), পিতা- মোঃ মহিউদ্দিন ফরাজি, সাং-গহরপুর, ০১ নং ওয়ার্ড সহ তার সহযোগী (২) আব্দুর রহিম কাজী (৪৮), পিতা-আঃ সালাম কাজী, সাং-দক্ষিণ জ্ঞানপাড়া, ০৬নং ওয়ার্ড, চরদুয়ানী ইউপি, (৩) আব্দুর রহিম মুন্সী (৩৫), পিতা-মোঃ ইউনুস মুন্সী, মাতা-রহিমা বেগম, (৪) মোসাঃ তাহিরা (১৯), স্বামী আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে তানভির ওরফে শিশু ফকির, (০১নং আসামীর স্ত্রী), সাং-গহরপুর, ০১ নং ওয়ার্ড, ০৪নং পাথরঘাটা সদর ইউপি, এপি-পিতা-মোঃ ইউনুস মুন্সী, সাং- হোগলাপাশা ০৪নং ওয়ার্ড, চরদুয়ানী ইউপি (৫) মোসাঃ রহিমা (৫৫), স্বামী- মোঃ ইউনুস মুন্সী, (০১নং আসামীর শাশুড়ী), (৬) মোসাঃ তানজিলা (২৮), পিতা-মোঃ ইউনুস মুন্সী, উভয় সাং- হোগলাপাশা ০৪নং ওয়ার্ড, চরদুয়ানী ইউপি, সর্ব থানা-পাথরঘাটা, জেলা-বরগুনাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
এ ঘটনায় পাথরঘাটা উপজেলার দক্ষিণ পাথরঘাটা গ্রামের ভিকটিম হাসিবের পিতা শফিকুল ইসলাম(৪৩), অপহরণের পর দিন পাথরঘাটা থানায় লিখিতভাবে জানান যে, তার ছেলে ভিকটিম হাসিব(১৩) ২০/১০/২০২৩খ্রি. সন্ধ্যা অনুমান ১৯:৩০ ঘটিকায় পূজা দেখার জন্য বাড়ি থেকে পাথরঘাটা বাজারে যায়।
একই তারিখ রাত্র হয়ে গেলেও বাড়ি ফিরে না আসায় ভিকটিমের পরিবারের লোকজন সম্ভাব্য সকল স্থানে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোন সন্ধান না পাওয়ায় এ সংক্রান্তে পাথরঘাটা থানার একটি সাধারণ ডায়েরী করেন তার নং- ৯৯১, তারিখ-২১/১০/২০২৩খ্রি: মূলে লিপিবদ্ধ হয়।
বিষয়টি বরগুনা জেলা গোয়েন্দা শাখা অফিসার ইনচার্জ মোঃ বশির আলম নিশ্চিত করেছেন।