ঢাকা: এক আলোচনা সভায় বক্তারা পথশিশু ও যৌন শোষণের শিকার শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দায়িত্ব গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন।
তাদের মতে, শুধুমাত্র নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে পথশিশুসহ যৌনশোষণের শিকার শিশুরা রাত্রিকালীন সময়ে শারীরিক, মানসিক, যৌননির্যাতন ও শোষণের শিকার হচ্ছে।
সম্প্রতি রাজধানীর ধানমন্ডিতে অনুষ্ঠিত সাংবাদিকদের সাথে এক পরামর্শমূলক সভায় উক্ত আহবান জানানো হয়।
শিশু অধিকার নিয়ে কর্মরত প্রতিষ্ঠান ইনসিডিন বাংলাদেশ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
তারা বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশই হচ্ছে শিশু।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক প্রাপ্ত তথ্যানুসারে বাংলাদেশে পথশিশুর বর্তমান সংখ্যা প্রায় ১.৬৩ মিলিয়ন।
নাগরিক জীবনের কাঠামোয় লাখো পথশিশু রাজপথে নিরাপত্তাহীন জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে। ঢাকা শহরে পথে বসবাসরত শিশুরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকমের ঝুকির সম্মুখীন হয়।
নিরাপত্তা ঝুকির পাশাপাশি বিভিন্ন রকম হয়রানি, কটুকথা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এগুলো তাদের প্রতিনিয়ত সঙ্গী। এই শিশুরা নিরাপদ আবাস, পুষ্টিকর খাদ্য, স্বাস্থ্য সুবিধা, শিক্ষার সুযোগ প্রভৃতি সব কিছু থেকে বঞ্চিত উপরন্তু প্রায়শই তাদের নিপীরণ, হুমকি, পাচার ও সহিংসতার শিকারও হতে হয় যা প্রতিনিয়ত তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে ব্যাহত করে।
তারা বলেন, অভিভাবক এবং সামাজিক পরিচয় না থাকায় এই শিশুরা বিদ্যালয়ের শিক্ষা, হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা, দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কারিগরি শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত।
প্রায়শই তারা অন্যদের সাথে কম যোগাযোগ করে থাকে এবং তাদের এই বিচ্ছিন্ন্করণ প্রক্রিয়াই তাদেরকে যেকোন ধরণের নির্যাতন, নিপীড়ন ও নিগ্রহের ঝুঁকির মাঝে ফেলে দেয়।
সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিষ্ঠানের সুস্পষ্ট দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা না থাকায় পথশিশু বিশেষ করে যৌনশোষণ ও নির্যাতনের শিকার পথশিশুরা প্রতিনিয়ত ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
”’শিশুরা প্রতিনিয়ত যে ধরণের ঝুকি, নিপীড়ণ ও বৈষম্যের সম্মুখীন হচ্ছে তার ফলে শিশু অধিকার লংঘন প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে।
এই বিষয়টি জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে বর্ণিত ১৭, ১৯ এবং ৩৪ ধারাকে সুস্পষ্টভাবে লংঘন করছে। এধরনের নির্যাতন ও সহিসংসতা শিশুদেরকে আরও অসহায় করে তুলছে এবং তাদেরকে ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এর ফলে শিশুরা শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় পতিত হচ্ছে, তাদের সামগ্রিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে, তারা নানা বঞ্চনার শিকার হচ্ছে এবং সমাজের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।
শিশুদের এই সমস্যাগুলো শিশু অধিকার সনদে বর্ণিত ২, ৬, ১২, ৩৫ এবং ৩৯ ধারা লংঘনের সঙ্গেও যথেষ্ট সম্পৃক্ত”।
ইনসিডিন বাংলাদেশ একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই প্রতিষ্ঠান বঞ্চিত পথশিশু, যৌন নির্যাতিত ও শোষিত শিশুদের নিয়ে কাজ করছে।
ইনসিডিন বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে, নিরাপদ রাত্রি যাপন শিশু অধিকারের অন্যতম অঙ্গীকার এবং তা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ইনসিডিন বাংলাদেশ পথশিশু ও যৌনশোষণের শিকার শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণের আহবান জানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ইনসিডিন বাংলাদেশ এবং সমমনা সংগঠন সমূহের (কর্মজীবি কল্যাণ সংস্থা, সেক্স ওয়ার্কার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ এবং শাপলা মহিলা সংস্থা) উদ্যোগে ঢাকা, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলায় শিশুসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবিদের থেকে ৭১০০ স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে যার মাধ্যমে তারা ‘পথশিশুদের নিরাপদ রাত্রির নিশ্চয়তার’ দাবির প্রতি সংহতি জানিয়েছে। ‘পথশিশুদের নিরাপদ রাত্রির নিশ্চয়তা’র দাবি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই ৭১০০ স্বাক্ষর সম্বলিত পিটিশন/দরখাস্তটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়রের কাছে সম্প্রতি হস্তান্তর করা হয়েছে।
এই পিটিশন এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো: স্থানীয় সরকার কর্তৃক পথশিশু বিশেষ করে যৌনশোষণ ও নির্যাতনের শিকার পথশিশুদের নিরাপদ রাত্রি সেবা নিশ্চিত করা, এবং শিশু সুরক্ষা প্রক্রিয়া অধিক জোরদার ও সুসংহত করা।
নিঃসন্দেহে এই উদ্যোগ পথশিশু বিশেষ করে যৌনশোষণ ও নির্যাতনের শিকার পথশিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় ইতিবাচক ভ‚মিকা পালন করবে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সকল ক্ষেত্রে সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য ও বৈষম্য কমানোর জন্য নীতিনির্ধারকদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন নীতিমালায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও নতুন নীতিমালা নির্ধারণেও এই উদ্যোগ অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করবে বলে বক্তারা মনে করেন।
ইনসিডিন বাংলাদেশ এর অপারেশন চীফ মো. মুশফিকুর রহমান শাব্বির অুনষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
ইনসিডিন বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী মাহবুব মির্জা অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা প্রদান করেন।
প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।