নিজস্ব প্রতিবেদন: দুই লক্ষাধিক পর্যটকে মুখর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। ভরা মৌসুম হলেও এবার এ রকম বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম হয়েছে বহুদিন পর। পর্যটকের ভীড়ে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরাও বেজায় খুশি।
ডিসেম্বর মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা শেষের পাশাপাশি সাপ্তাহিক ও মহান বিজয় দিবসের ছুটি কাটাতে সাগর সৈকতে ভিড় করছে লাখো পর্যটক।
শীতের হিমেল হাওয়া ও শিশির ভেজা বালিয়াড়ি আর সাগরের নীল জলরাশিতে উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে মেতেছে আগত পর্যটকরা।
সমুদ্র সৈকত ছাড়াও বার্মিজ মার্কেটসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোও পর্যটকে মুখর। উচ্ছ্বাসের কমতি নেই আগত পর্যটকদের। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফগার্ড কর্মীসহ জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছে।
বিএনপিসহ তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলের ডাকা একের পর এক হরতাল ও অবরোধের কারণে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছিল কক্সবাজার। তবে দীর্ঘদিন পর বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে কক্সবাজারে পর্যটক আগমন বৃদ্ধি পেতে থাকে। গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার মহান বিজয় দিবসে কয়েক লাখ পর্যটকে মুখর হয় বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। কক্সবাজারের সাড়ে পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেল ও গেস্ট হাউজ বুকিং হয়ে গেছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় পর্যটন মৌসুমের। এবারের মৌসুম শুরু হতে না হতেই ২৮ অক্টোবর থেকে বিএনপির ডাকা টানা অবরোধ কর্মসূচি পর্যটন বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে কক্সবাজার। ফলে ভরা মৌসুমে প্রতিদিন পর্যটন খাতের সব মিলে কমপক্ষে গড়ে অর্ধশত কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানান পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যটনের অন্ধকার যাত্রায় আলো হয়ে আসে কক্সবাজারের সঙ্গে রাজধানীর রেলপথ যোগাযোগ।
১ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ঢাকা-কক্সবাজার পথে রেল যোগাযোগ চালু হওয়ায় প্রতিদিনই হাজারো পর্যটক আসা-যাওয়ায় রয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, দুই লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পর্যটকদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, গত ২৮ অক্টোবর থেকে আমরা লোকসানের মধ্যে আছি। সময়টা খুবই মন্দা গেছে। পর্যটকই ছিল না। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে হঠাৎ পর্যটক বেড়ে গেছে। ১৬ ডিসেম্বর দুই লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজারে এসেছে। পর্যটক আসায় কিছুটা হলেও লোকসান কাটানোর সুযোগ হয়েছে। দুই হাজার টাকার মধ্যে মানসম্মত রুম পাওয়া যাচ্ছে। পর্যটকদের সর্বোচ্চ সেবা দানে আমরা আন্তরিক।
মহান বিজয় দিবসের ছুটিতে পর্যটকে মুখর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। আজ শনিবার তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠে
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, শুক্র ও শনিবার শতভাগ হোটেল কক্ষ বুকিং রয়েছে। এর পরের তারিখে বুকিং দেওয়া পর্যটকরাও কক্সবাজারে আসতে শুরু করেছে। দুই হাজার টাকার মধ্যে হোটেল কক্ষ পাওয়া যাচ্ছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ১৬ ডিসেম্বর কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের সমাগম হয়েছে। পর্যকদের নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ, বিচ কর্মীসহ পর্যটক সেবায় নিয়োজিত সবাই কাজ করছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, কক্সবাজারে আগত পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়, যাতে স্বাচ্ছন্দে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারে সেই লক্ষ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।