নিজস্ব প্রতিবেদন: মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নর্থ মেসিডোনিয়া, হাঙ্গেরিসহ পূর্ব ইউরোপের ১৪ দেশের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে একথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ। বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ বলে ক্ষমতাসীন দলের অনেকেই বিচারের সম্মুখীন হয় ও জেলে যায়। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে যে মামলা, সেখানে সরকার কোনো পক্ষ নয়। যেসব শ্রমিক কর্মচারী বঞ্চিত হয়েছে, তারাই তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচারটা হচ্ছে।
তিনি বলেন, লবিস্ট ফার্মের মাধ্যমে এটা করা হয়েছে। ড. ইউনূসের বিচার স্বচ্ছ প্রক্রিয়াতেই হচ্ছে।
এর আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ‘ধারাবাহিক বিচার বিভাগীয় হয়রানি এবং কারাদণ্ড’ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি পাঠান শতাধিক নোবেল বিজয়ীসহ বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় ২৪২ ব্যক্তি।
চিঠিতে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর রয়েছেন।
ড. ইউনূসের ‘প্রহসনমূলক’ বিচারের অবসানের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি লেখেন তারা। চিঠিটি ২৮ জানুয়ারি ‘প্রটেক্ট ইউনূস ডট ওয়ার্ডপ্রেস ডট কম’ (protectyunus.wordpress.com) ওয়েবসাইটে এবং ২৯ জানুয়ারি মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশ করা হয়।
চিঠিতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুটি মামলা পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সোমবার প্রকাশিত ওই খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে আরও আছেন তাওয়াক্কুল কারমান, নাদিয়া মুরাদ, মারিয়া রেসা ও হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোসসহ ১৬ জন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী রয়েছেন ৬ জন। তাদের মধ্যে ওরহান পামুক ও জে এম কোয়েটজি রয়েছেন।
জোসেফ স্টিগলিৎজসহ অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী আছেন ১২ জন। এছাড়া রসায়নে ৩৬ জন নোবেল বিজয়ী, চিকিৎসাশাস্ত্রে ২৯ জন নোবেল বিজয়ী এবং পদার্থবিজ্ঞানে ২৬ জন নোবেল বিজয়ী রয়েছেন।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, যুক্তরাজ্যের ধনকুবের স্যার রিচার্ড ব্রানসনসহ শতাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি রয়েছেন চিঠিতে স্বাক্ষরদাতাদের তালিকায়। তাদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী, সামরিক কমান্ডারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা রয়েছেন।
চিঠিতে ড. ইউনূসের বিভিন্ন অর্জনের বিষয়ে বলা হয়েছে, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম ও কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল পাওয়া বিশ্বের মাত্র সাতজন ব্যক্তির একজন হচ্ছেন ড. ইউনূস।
২০২০ সালে টোকিও অলিম্পিকের সময় তাকে অলিম্পিক লরেল অ্যাওয়ার্ড এবং ২০২৩ সালে সৌদি আরবে ওয়ার্ল্ড ফুটবল সামিট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়।
এছাড়া স্বাধীনভাবে করা গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসা নিয়ে ড. ইউনূসের কাজের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহু মানুষের জীবনমানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
ড. ইউনূসকে হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে এর আগে গত বছরের মার্চে ও আগস্টে দুটি খোলা চিঠি দেয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর।
এদিকে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ড. ইউনূসের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার সংশ্লিষ্ট আপিল ট্রাইব্যুনালে শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলার ৬ মাসের দণ্ড দিয়ে রায় বাতিল ও সাজা থেকে খালাস দিতে ২৫ যুক্তিতে আপিল আবেদন করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ তাদের আইনজীবী।
ড. ইউনূস অভিযোগ করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সরকারের প্রতিষ্ঠান, তাদের দিয়ে মামলা করিয়েছে সরকার। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মামলা করেছেন শ্রমিকরা, যা সঠিক নয়।
অপরদিকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের আইনজীবী বলেছেন, সরকারের ইশারায় নয় বরং শ্রম আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে পহেলা জানুয়ারি গ্রামীণ টেলিকমদের শ্রমিকদের স্থায়ী না করা, ছুটি নগদায়ন না করা ও ৫ শতাংশ লভ্যাংশ না দেয়ার অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় শ্রম আইনের দুই ধারায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে সর্বোচ্চ সাজা ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং আরেকটি ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করে শ্রম আদালত।
আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ড. ইউনূসের জামিনআপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ড. ইউনূসের জামিন
সোমবার গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক সূত্র জানায়, ড. ইউনূস ছাড়া অভিযোগপত্রে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক মো. কামরুল হাসানের নাম রয়েছে।
অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে কামরুল হাসানের নাম তদন্তের পর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাকি ব্যক্তিদের নাম এজাহারে ছিল।
ইউনূসের কারণে বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে না: হাছানইউনূসের কারণে বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে না: হাছান
দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে গত বছরের ৩০ মে মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ধারায় অপরাধ।
দুদক সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ–সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠিয়েছিল। দুদক দীর্ঘ অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে মামলা করে। সেই মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার অনুমোদন পাওয়া গেছে।