নিজস্ব প্রতিবেদন: মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি বাংলাদেশের বান্দারবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রু এলাকায় এসে পড়েছে। শনিবার দুপরে তুমব্রু সীমান্তে চলাচলকারী একটি সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশায় গুলি লাগে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
সীমান্তের লোকজন বলছেন, শনিবার দুপুর থেকে বান্দারবানের তুমব্রু ও টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় মর্টারশেল ও গোলাগুলি শব্দ শুনেছেন। এছাড়া তুমব্রু এলাকায় গুরা মিয়া নামের এক চালকের অটোরিকশায় মিয়ানমারের ছোড়া গুলি এসে পড়ে। কিন্তু কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে নতুন করে যেন কেউ অনুপ্রবেশ করতে না পরে সেজন্য সীমান্ত নাফনদে টহল জোরদার রেখেছেন বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা।
শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের বসবাসকারী আব্দুস সালাম বলেন, সকাল-দুপুরে মিয়ানমার সীমান্ত থেকে অনেক গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে৷ এছাড়া সীমান্তের ওপারে বহু মানুষ এপারে অনুপ্রবেশের অপেক্ষা রয়েছে বলে জেলেদের কাছ থেকে শুনেছি।
তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দা মুহাম্মদ শাহাজান মিয়া বলেন, দুপুর থেকে ফের সীমান্তে মর্টারশেল-গোলাগুলি চলছে। এতে এখনকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এছাড়া অটোরিকশায় মিয়ানমারের ছোড়া গুলি এসে পড়েছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মর্টারশেল ও গোলাগুলি বন্ধ না হওয়ায় সীমান্তে বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক কমেনি। আজকেও তুমব্রু সীমান্তে মর্টারশেল ও গোলাগুলি শব্দ শোনা গেছে।
সীমান্তে নজর রাখের এমন এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, কয়েকদিন ধরে সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা কিছু লোকজন অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছেন। কিন্তু সীমান্তরক্ষীরা তাদের ঢুকতে দিচ্ছেন না।
এ বিষয়ে টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লুৎফুল লাহিল মাজিদ বলেন, সীমান্তে আমাদের টহল জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে নতুন করে যেন কেউ অনুপ্রবেশ করতে না পারে। এছাড়া চোরাচালান রোধেও আমরা সর্তক অবস্থানে রয়েছি।
এদিকে, মিয়ানমারে চলমান সংঘর্ষে একমাত্র ভাইকে হারিয়েছেন জুবাইদা। সেখানে আছে তার সন্তান। কয়েকদিন ধরে ওপারে থাকা স্বজনদের কোনো খবর পাচ্ছেন না বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে বাস করা জুবাইদা। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন তিনি।
জুবাইদা বলেন, গত সোমবার আমার ভাই মারা যায়। মঙ্গলবার ওরা পুরো এলাকা জ্বালিয়ে দেয়। ১৫০ জনের মতো মানুষ হতাহত হয়েছেন। বাকিরা বিভিন্ন পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এমন শীতের মধ্যে খাওয়া-দাওয়া করতে পারছে কিনা জানি না। এসব শুনেছি বিদেশ থেকে। দেশের কারোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। এ ঘটনায় নিজ ভূমিতে ফেরা নিয়েও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে বাস করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনা নির্যাতনের কারণে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন। এর মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। উখিয়া ও টেকনাফের ছোট-বড় ৩২টি ক্যাম্পে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন।