৬৫
রবিউল ইসলাম, ঝিনাইদহ
আহসান উদ্দীন আফাঙ্গীর বয়স ৬৫ বছর। যে বয়সে নাতি নাতনি নিয়ে অবসর সময় কাটানোর কথা সেই বয়সে মাঠে বল নিয়ে দৌড়ান ঝিনাইদহের আফাঙ্গীর। ফুটবল খেলতে তার কোন ক্লান্তি নেই। নেই চেহারায় বয়সের ছাপ, এখনো প্রানবন্ত খেলার মাঠে। কয়েক’শ টুর্ণামেন্ট খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজ ব্যাগের কারখানায় অবসর সময় কাটান এক কালের দোর্দন্ত মিডফিল্ডার কিংবদন্তি আহসান উদ্দীন আফাঙ্গীর।
১৯৫৩ সালে ঝিনাইদহ শহরের পার্কপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন আহসান উদ্দীন আফাঙ্গীর। তার পিতার নাম মৃত শামছুদ্দীন আহম্মেদ। ঝিনাইদহ তখন বন বাদাড়ের শহর, রাস্তাঘাট নেই। তখন থেকেই ফুটবলের হাতে খড়ি তার। কৈশর থেকে যৌবন পর্যন্ত মাঠ দাপিয়ে নিজ দলকে জয়ী করেছেন। সুউচ্চে তুলে ধরেছেন ঝিনাইদহকে। সেই আফাঙ্গীর ৬৫ বছর বয়সেও এখনো ফুটবল খেলেন। তাই তো ঝিনাইদহ উজির আলী স্কুল মাঠ ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে সকাল বিকাল প্র্যাকটিসে তাকে দেখা যায়।
এই বয়সে আফাঙ্গীরের ফুটবল খেলা দেখে নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়রা অনুপ্রাণিত হয়। ফুটবল মাঠে তাকে গুরু বলে সম্মান করেন। ফুটবল মাঠে আফাঙ্গীর নতুন প্রজন্মকে টিপস দেন, শেখান কলা কৌশল। মুক্তিযুদ্ধের সময় আহসান উদ্দীন আফাঙ্গীর ১৮ বছরের যুবক। ভারতের রানাঘাটে ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন। কিন্তু তার নাম তালিকায় নেই। এ নিয়ে তার দুঃখ নেই। দেশ স্বাধীনে অংশ নিয়েছেন এটাই তার বড় পাওয়া। ১৯৭২ সাল থেকে তিনি ফুটবল খেলেন।
সেই যে মাঠে দৌড়ানোর পথচলা শুরু, এখনো অবিরাম আর প্রানবন্ত ফুটবল খেলেন মাঠে। প্রথমে মহাকুমা ও পরে বৃহত্তর যশোর জেলা টিমে খেলেছেন। নিয়মিত লীগ খেলেছেন ঢাকা ও খুলনায়। মহাকুমা থেকে জেলায় রুপান্তরিত হওয়ার পর থিতু হয়েছেন ঝিনাইদহ জেলা ফুটবল টিমে। এক নাগাড়ে ১৫ বছর ঝিনাইদহ জেলা ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন হিসেবে দক্ষতার সাথে দল পরিচালনা করেছেন। কিন্তু তার কোন মুল্যায়ন হয়নি। নেতৃত্ব দেওয়া হয়নি ক্রীড়া সংস্থার।
এতে আফাঙ্গীরের কোন ক্ষোভ বা দুঃখ নেই। ফুটবল ফেডারেশনের সনদধারী রেফারী আফাঙ্গীর জেলা ক্রিড়া সংস্থার সদস্য হয়ে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে জেলাবাসীর জন্য কাজ করে যেতে চান। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই কন্যা সন্তানের জনক। নিজ বাড়িতেই রয়েছে হ্যাপার ব্যাগ তৈরীর কারখানা। স্বামী স্ত্রী মিলে সেখানেই অবসর সময় কাটান এক সময়ের মাঠ কাঁপানো ফুটবলার আহসান উদ্দীন আফাঙ্গীর। জেলার একজন গুনী ফুটবলার হিসেবে তিনি খ্যাত। এই বয়সেও যে তিনি এখনো মাঠে ফুটবল খেলেন এটা দেখে সবাই অবাক হন।