নিজস্ব প্রতিবেদন: বৃহত্তর ময়মনসিংহে অসুস্থদের চিকিৎসার প্রধান ভরসার জায়গা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। কিন্তু এই হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসা অপ্রতুল। এখানে ক্যান্সার আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে ৯ শয্যাবিশিষ্ট একটি ডে কেয়ার সেন্টার। ২০১৫ সাল থেকে বিকল একমাত্র রেডিওথেরাপি মেশিন। দরিদ্র রোগীদের রেডিওথেরাপি নিতে ছুটতে হয় ঢাকায়। তবে অনেকের পক্ষে ঢাকায় গিয়ে রেডিওথেরাপি নেওয়া সম্ভব হয় না। এদিকে বিশেষায়িত ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের কাজ গত বছরের মাঝামাঝিতে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজের ধীরগতির কারণে তা সম্ভব হয়নি।
ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রতিবছর ক্যান্সার আক্রান্ত বাড়ছে। যথাযথ চিকিৎসাসেবা না পেয়ে রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০২৩ সালে ২ হাজার ২০০ ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ২০২২ সালে চিকিৎসা নেন ২ হাজারের বেশি এবং ২০২১ সালে চিকিৎসা নেন ১ হাজার ৯০০ রোগী। হাসপাতালে ১৯৯৬ সালের ১০ নভেম্বর কোবাল্ট সিক্সটি রেডিওথেরাপি মেশিন চালু করা হয়। ২০১৫ সাল পর্যন্ত এটি সচল ছিল। বিকল হওয়ার পর রেডিওথেরাপি মেশিন সচলের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বর্তমানে রেডিওথেরাপি বাদে কেমোথেরাপি, হরমোনথেরাপি, সার্জারিসহ অন্য চিকিৎসা চলছে। বিশেষায়িত কোনো ইউনিট না থাকায় মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি ওয়ার্ডে ক্যান্সার রোগীদের রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার চৌগাঙ্গা ইউনিয়নের বাদুতিকান্দা গ্রামের কৃষক মো. সুলতান ২০২২ সাল থেকে পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন তিনি। গত রোববার তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘এইডাই আমার জীবনের শেষ চিকিৎসা। দুই বছরে নিজের জমি বেইচ্যা, আত্মীয়স্বজনের কাছ থাইক্যা আইন্যা ৬ লাখ টাকার মতো খরচ করছি। অহন আর কারও কাছে হাত পাততে পারতাম না। ঘরে পইরাই মরবাম।’
রেডিওথেরাপি বিভাগের চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম পাঠান বলেন, ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার অন্যতম অনুষজ্ঞ রেডিওথেরাপি। এর মাধ্যমে যন্ত্রণা উপশম করা হয়। রেডিওথেরাপির জন্য রোগীদের ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। মেশিনটি চালু থাকলে ক্যান্সার রোগীদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা এখানেই হতো।
তিনি আরও বলেন, এ অঞ্চলে প্রতিবছর ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ বেশি। খাদ্যে ভেজালের কারণে এটা বেশি হচ্ছে।
এদিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ চত্বরে চলছে ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের কাজ। প্রকল্প এলাকায় সাঁটানো সাইনবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত হবে ক্যান্সার ইউনিট। অষ্টম তলা থেকে ১১ তলা পর্যন্ত নেফ্রোলজি ও ডায়ালাইসিস ইউনিট এবং ১২ থেকে ১৫ তলা পর্যন্ত কার্ডিয়াক ইউনিট। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
চট্টগ্রামের দেশ উন্নয়ন লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসপাতালটির নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায়। প্রায় ৮৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল নির্মাণের কথা ছিল প্রতিষ্ঠানটির। ২৪ মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার সময় বেঁধে দিয়ে ২০২১ সালের ৬ জুন প্রকল্প এলাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। ২০২৩ সালে ৫ জুন ক্যান্সার হাসপাতালটি নির্মাণকাজ সম্পন্নের কথা ছিল। কিন্তু এখনও পাঁচতলা পর্যন্ত কাজ হয়েছে। প্রকল্পটির সময় বাড়ানোর সঙ্গে নতুন করে কিছু বিষয় যুক্ত হওয়ায় আরও ১০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন।
নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী শামীম আল মামুন বলেন, কাজের গতি বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের সময় বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায়।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম বলেন, রেডিওথেরাপি মেশিনটি মেরামত করে সচলের জন্য চিঠি পাঠানো হলেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নতুন একটি ক্যান্সার ইউনিট হচ্ছে। সেখানে দুটি আধুনিক লিনিয়র এক্সিলারেটর মেশিন স্থাপন করা হবে। দ্রুত সেটির নির্মাণকাজ শেষ হয়ে চালু হলে এ অঞ্চলের রোগীরা উপকৃত হবে।