নিজস্ব প্রতিবেদন: মোস্তাফিজের ওভারের শেষ বলে চার মেরেই উদ্বাহু উদযাপন শুরু ডেভিড মিলারের। মাঠেই সেজদা দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাউন্ডারি সীমানার বাইরে অপেক্ষায় থাকা বরিশালের খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাসই-বা বাঁধ মানবে কেন! তাঁরাও দৌড়ে ঢুকে পড়েন মাঠে। চারবারের চেষ্টায় যে শিরোপা ঘরে এসেছে, সেটার উদযাপন তো এমন বাঁধবাঙা হবেই। বিপিএলের ফাইনালে আজ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে ৬ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা ঘরে নিয়ে গেছে ফরচুন বরিশাল।
এ আনন্দ উদ্যাপনের মধ্যেই মাঠের সব আলো নিভে যায়। সে অন্ধকার মুহূর্তের, অন্ধকার ফুঁড়ে এরপর যখন আলো দেখা গেল মিরপুর স্টেডিয়ামে, সে আলো চোখ ধাঁধায়। এ যে আতশবাজির আলো! বিপিএলের নতুন চ্যাম্পিয়নদের বরণ করে নেওয়া আলো।
তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, কাইল মায়ার্স, মেহেদি হাসান মিরাজ, সৌম্য সরকার, ওবেদ ম্যাকয়, ডেভিড মিলারদের শুভেচ্ছায় সিক্ত করা সে আলো।
এর আগে আরও তিনবার ফাইনাল খেলেছে বরিশাল। তবে প্রথম দুটি ছিল বরিশাল বার্নার্স ও বরিশাল বুলসের ব্যানারে। বিপিএলের প্রথম তিন মৌসুমে দুবার ফাইনাল খেলা দলটির দুবারই রানার্সআপ হয়েছিল। এরপর নাম-মালিকানা বদলে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির নাম হয় ফরচুন বরিশাল। ২০২২ সালে সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ফাইনালে উঠেও শেষ ওভারের নাটকীয়তায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করতে হয়। অবশেষে ফাইনালে চতুর্থবারের চেষ্টায় সফল হয়েছে বরিশাল, সেই কুমিল্লাকেই হারিয়ে। তবে এবার তামিম ইকবালের নেতৃত্বে।
শুধু অধিনায়ক হিসেবেই নয়, ব্যাট হাতেও নেতৃত্বটা তামিমই দিলেন। কুমিল্লার ১৫৪ রান তাড়ায় শুরুতে যে ঝড় তুলেছিলেন তামিম, তাতেই শিরোপার গল্প লেখার সব রসদ পাওয়া হয়ে যায় বরিশালের। দলীয় ৭৬ রানে যখন ক্রিজে ফিরছেন, তামিমের নামের পাশে ২৬ বলে ৩৯ রান। জয়ের ভিত ততক্ষণে গড়ে ফেলেছে বরিশাল।
সে ভিতে দাঁড়িয়েই পরে ঝড় তুলেছেন কাইল মায়ার্স (৩০ বলে ৪৬ রান)। শেষ পর্যন্ত ইনিংসের ৬ বল বাকি থাকতে জিতেছে বরিশাল। তবে তারা যে জিততে যাচ্ছে, সে নিশ্চয়তা তো তামিমের পর মায়ার্সের ঝড়েই পাওয়া হয়ে গিয়েছিল।
আজ বরিশাল ইনিংসের শুরুতে কী বুঝে নতুন দুই বোলার নিয়ে এলেছিলেন কুমিল্লা অধিনায়ক লিটন দাস, এ নিয়ে পরে আফসোস করতেই পারেন। ১৫৪ রান ডিফেন্ড করতে শুরুতেই বরিশালের ওপর আক্রমণ চালাতে হতো। কিন্তু তানভীর ইসলাম ও রোহান উদ দৌলা বর্ষণ সেটা পারলেন কোথায়? উল্টো প্রথম দুই ওভারে দিয়ে বসলেন ৪১ রান। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, মিরপুরের ২২ গজে শুরুতেই ঝড় তোলেন বরিশালের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
এরপর সুনীল নারাইন ও মোস্তাফিজুর রহমান এসে প্রতিআক্রমণ চালালেও পাওয়ার প্লে-র ছয় ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৯ রানে পৌঁছে যায় বরিশাল। স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করছিলেন তামিম-মিরাজ। এক প্রান্তে চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি তামিমের ব্যাটে, অন্যপ্রান্তে পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে ব্যাটিং করছিলেন মিরাজ। দুজনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ম্যাচের পাল্লা ধীরে ধীরে হেলতে থাকে বরিশালের দিকে।
এময় অবস্থায় মাত্র ৬ রানের ব্যবধানে দুই সেট ব্যাটসম্যানকে হারায় বরিশাল। ইনিংসের অষ্টম ওভারের প্রথম পাঁচ বলে মঈনকে এক ছক্কা ও দুই চার মেরেছিলেন তামিম। ওভারের শেষ বলেও আগ্রাসী তামিম বড় শট খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ডাউন দ্য ট্র্যাকে এসে মারতে গিয়ে ব্যাটে বলে করতে পারেননি বরিশাল অধিনায়ক।
দলকে ৭৬ রানে রেখে সরাসরি বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তামিম। একইসঙ্গে অপ্রয়োজনীয় শটে সমাপ্তি ঘটে ২৬ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় সাজানো দারুণ ইনিংসের। তার অনেক আগেই অবশ্য নিশ্চিত হয়ে যায়, তামিমই হচ্ছেন এই বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। শেষ পর্যন্ত টুর্নামেন্টে তাঁর রান দাঁড়াল ৪৯২।
তামিমের বিদায়ের পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে আরেক ওপেনারকে মিরাজকেও (২৬ বলে ২৯ রান) ফিরিয়েছেন মঈন। দুই ওপেনারকে হারালেও পথ হারায়নি বরিশাল। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির প্রথম শিরোপা জয়ের পথ কমিয়ে আনতে থাকেন কাইল মায়ার্স। অন্যপ্রান্তে মায়ার্সকে সঙ্গ দেন মুশফিক।
কিন্তু বিধ্বংসী মায়ার্স দলের জয় থেকে ১৪ রান দূরে থাকতে সাজঘরে ফেরেন। ফেরার আগে মাত্র ৩০ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪৬ রান করেন তিনি। ৩ রানের ব্যবধানে একই পথ ধরেন মুশফিকও (১৭ বলে ১৩ রান)।
তাতে ম্যাচের চিত্রের খুব বেশি হেরফের হয়নি। মাহমুদউল্লাহ ও ডেভিড মিলারের ব্যাটে নিশ্চিত হলো, গতকাল সদরঘাটের পাশেই আহসান মঞ্জিলে যে ট্রফি উন্মোচিত হয়েছিল, বিপিএলের সে ট্রফি তামিমের হাত ধরে উঠছে বরিশালের লঞ্চে।