রবিউল ইসলাম, ঝিনাইদহ : দেশ স্বাধীনের পর থেকে বেগবতী নদীর গোয়ালবাড়ী ঘাটে একটি সেতুর দাবী দীর্ঘদিনের । ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর, জামাল, সুন্দরপুর-দূর্গাপুর ও নলডাঙ্গা ইউনিয়নের হাজারো মানুষ। দেশ স্বাধীনের পর থেকে দেশের অনেক সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে সব কিছুই পরিবর্তন হলেও এই কয়েকটি ইউনিয়নের হাজারো মানুষের একটি মাত্র সেতুর দাবী আজো পূরণ হয়নি।
একটি সেতুর জন্য ৫৩ বছরের এই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান না হওয়ায় আজো তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তালের ডোঙ্গা, কলার ভেলা ও বাশেঁর চরাটের সাকোঁ দিয়ে পার হয়ে আসছেন হাজারও মানুষ।
সরেজমিনে উপজেলার জামাল ইউনিয়নের তৈলকূপী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বেগবতী নদীর পাড়ে সুলতানের বাড়ির শুরু থেকে উত্তর দিকে হাজার হাজার মানুষের বসবাস, আবার অন্য পাড়ে নিয়ামতপুর ইউনিয়নের বারোপাখিয়া গ্রামে আব্দুস সাত্তার মাষ্টারের বাড়ি থেকে শুরু করে দক্ষিন ও দক্ষিন পূর্ব এলাকায় হাজারো মানুষের বসবাস।
তাদের নদী পারাপারের বিকল্প পথ না থাকায় একমাত্র ভরসা ঝুঁকিপূর্ণ এই জীর্ণশীর্ণ বাঁশের সাঁকো, না হয় পাড়ি দিতে হবে ৭ কিলো মিটার পথ।
এই সাকোঁ দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা দীর্ঘ সময় পারাপার হয়ে আসছেন।
এলাকাবাসী প্রতিনিয়ত গোয়ালবাড়ী ঘাটে বেগবতী নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিয়েও এই পর্যন্ত কোন জনপ্রতিনিধি অশ^স্থ্য করেননি। স্থানীয়রা কয়েক মাস পর পর নিজ খরচে সাঁকোটি মেরামত করে আসছেন। প্রায় ৪৫০ থেকে ৫০০ ফুট লম্বা এই নড়বড়ে বাশেঁর সাকোঁটি এখন তাদের একমাত্র ভরসা।
তবে এই সাকোঁর এক পাশে সরকারি রাস্তা না থাকায় গোয়ালবাড়ী ঘাটে সেতু নির্মানের দাবী জানিয়ে আসছেন। কারন গোয়ালবাড়ী ঘাটে বেগবতী নদীর দু’পাশেই সরকারি রাস্তা রয়েছে। তাছাড়া এই ঘাটে সেতু নির্মাণ করা হলে দূ’পাশে হাজারো মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন হবে।
তৈলকূপী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার জানান, গ্রামবাসীর চাঁদায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে আমরা জন্মের পর থেকে এই নদীতে বাঁশের সাকো অথবা তালের ডোঙ্গা দিয়ে পার হয়ে শহর-বাজার, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় অধিবাসীরা যাতায়াত করে আসছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন মাঠের ফসল নিয়ে কৃষকরা এ সাঁকো পার হয় দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে।
নদীর দু’পাশে রয়েছে চার চারটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একপাশে রয়েছে তৈলকূপী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অপর প্রান্তে রয়েছে বারোপাখিয়া দাখিল মাদ্রাসা, নরেন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক এতিমখানা ও মসজিদ। ছোট ছোট কোমলমতি শিশুরা এ নড়বড়ে সাঁকো পারাপারে প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
এ ছাড়া মুমূর্ষু রোগীদের হাসপাতালে আনা-নেওয়ার সময় বিপাকে পড়তে হয় স্বজনদের। এইতো গত ৩ বছর আগে জয়নাব নামে এক গৃহবধূ অসূস্থ হলে তাকে দ্রæত কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার জন্য সাকো পার হওয়ার সময় রোগী সাকোঁ থেকে পড়ে মারা যায়। এছাড়া আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরন করছেন অনেকে।
আমাদের এই অবস্থা কেউ দেখতে আসেন না। কবে শেষ হবে এই ভোগান্তি আমি জানিনা। গোয়ালবাড়ীর ঘাটের সেতুর স্বপ্ন দেখতে দেখতে অনেকেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। আমরাও এই সেতুর স্বপ্ন দেখছি, জানিনা কবে স্বপ্ন বাস্তবে রুপ নেবে। সবার মতো আমারও স্বপ্ন গোয়ালবাড়ী ঘটে দৃষ্টি নন্দন একটি সেতুর।
তৈলকূপী (দক্ষিনপাড়া) গ্রামের নূর আলী মীর বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদী পার হয়ে এ পার থেকে ওপারে যেতে যেন তাদের হিমশিম খেতে হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসূমে বেগবীত নদীতে উজানের পানি প্রবাহিত হওয়ার কারনে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে স্কুল, কলেজে যাতায়াতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা প্রায় বন্ধ করে দিতে হয়। এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি বেগবতী নদীর গোয়ালবাড়ী ঘাটে একটা দর্শনীয় নান্দনীক সেতু নির্মানের জন্য।
গোয়ালবাড়ী ঘাটের উপর বসবাসকারী কোরবান আলী জানান, বেগবতী নদীর ওপারে জামাল, নলডাঙ্গা, ঘোরশাল, ফুরসন্ধি, সূরাট ইউনিয়নসহ কয়েকটি ইউনিয়নের হাজারো মানুষের বসবাস। এসব ইউনিয়নের সাধারন মানুষ ও কলেজগামী শিক্ষার্থীরা এই নদী পার হয়ে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়। এতে তাদের উপজেলা সদরে যেতে প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে উপজেলা শহর কালীগঞ্জে যেতে হয়।
গোয়ালবাড়ী ঘাটে সেতুটি নির্মাণ করা হলে তাদের পাড়ি দিতে হবে মাত্র ৩কিলোমিটার। উপজেলা সদরের দূরত্ব কমবে ৪ কিলোমিটার পথ। এতে ব্যবসা বাণিজ্য এবং জীবন-যাত্রার মান উন্নয়ন হবে। তাই গোয়ালবাড়ী ঘাটে বেগবতী নদীর উপর সেতু নির্মাণে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সূ-দৃষ্টি কামনা করছি।
বেগবতী নদির দৈর্ঘ্য ৫৩ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩২ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা (পাউবো) কর্তৃক বেগবতী নদীর প্রদত্ত পরিচিতি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৬৩ নং নদী। বেগবতী নদী চুয়াডাঙ্গা জেলার মাথাভাঙা নদীর একটি শাখা।
এ ব্যাপরে জানতে চাইলে উপজেলার ২নং জামাল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেন মন্ডল বলেন, বেগবতী নদীর গোয়ালবাড়ীর ঘাটে একটি সেতু যে, কতো প্রয়োজন সেটা বলে বোঝানো যাবে না। এখানে সেতুটা নির্মাণ করা হলে দু’পাড়ের হাজারো মানুষের বড় রকমের দূর্ভোগ লাঘোব হবে। উন্নয়ন হবে ব্যবসা-বাণিজ্যের, মানুষ সহজেই উপজেলা ও জেলা শহরে যেতে পারবে। উপজেলা সদরে যেখানে সময় লাগে ২ ঘন্টা, সেতু নির্মাণ হলে সময় লাগবে ২০ মিনিট।
এলাকার হাজারো মানুষের স্বপ্ন পূরনে আমি এই সেতুর জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মহলে দেন-দরবার করেছি কিন্তু আজও সেতুর স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি।
এলাকাবাসীর দাবীই আমার প্রাণের দাবী আমিও চাই এখানে সেতু নির্মাণ হোক। সেতু নির্মাণে আমার চেষ্ঠা অব্যহত আছে এবং থাকবে। আশা রাখি আমার চেষ্টা বিফলে যাবে না। আমি আমাদের ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার মহোদয়ের সাথে আলাপ করে সেতুটি নির্মাণ করার চেষ্টা করছেন।